অনলাইন ডেস্ক: কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ১৯৬তম পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি এ ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
শনিবার সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক এই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসউদ। জামাতের পর বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
ভোরের আগেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশপাশের এলাকা। চার স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। এতে মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে মুসল্লিদের খানিকটা দেরি হয়। তারপরও সকাল ৯টার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে জামাতে ছাতা, লাঠিসোটা, দিয়াশলাই কিংবা লাইটার নিয়ে মাঠে প্রবেশে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে এসব রেখে মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশ করতে হয়েছে।
ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরের এ ঈদগাহ মাঠে। ঈদগাহমুখী সব রাস্তাঘাট মুসল্লিদের দখলে চলে যাওয়ায় কয়েক ঘণ্টার জন্য শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জামাত শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পাশের রাস্তায়, তিন পাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও আশপাশের বাড়ির ছাদে উঠে জামাতে শরিক হতে দেখা যায়।
অন্যদিকে নারীদের জন্য শহরের সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। সেখানেও বহু নারী ঈদ জামাতে অংশ নেন।
মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার রাসেল শেখ ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ।
শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র মাহমদু পারভেজসহ জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ৭০ বছরের আলাউদ্দিন শেখ। তিনি ৪০ বছর ধরে এ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করছেন। তিনি জানান, যতদিন বেঁচে আছি, এভাবে শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে অংশ নেবো।
সাইকেল চালিয়ে এসেছেন শোলাকিয়ায় পাকুন্দিয়া সদরের আবুল কাশেম। তিনি বলেন, বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে সওয়াব বেশি হয়। তাছাড়া আল্লাহতালা মনের আশাও পূরণ করেন। তাই বার বার ছুটে আসি এ শোলাকিয়ায়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবার পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন বলে আমাদের ধারণা। এবারের জামাতের ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো ছিল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
জানা যায়, ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। নামাজ শেষে জামাতে আসা যাত্রীদের নিয়ে আবার গন্তব্যে ফিরে যায় ট্রেন দুটি।
টিএমবি/এইচ