দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

স্টাফ রিপোর্টার : কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচীর আওতায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ফ্লাড কন্ট্রোল ড্রেনেজ (এফসিডি) প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যাবহার ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কমিটির সভাপতি ও তিন সদস্যসচিবসহ ৩৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে। খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা কাবিটার স্ক্রীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির সভাপতি। অন্যদিকে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তিনজন উপসহকারি প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ওবায়দুল হক ও এনায়েত হোসেন হলেন উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব। কাবিটার নীতিমালায় প্রকল্পের বাঁধসমূহ সংস্কার ও মেরামত কাজ প্রকল্প এলাকার আওতাধীন ও সন্নিনিকটবর্তী জমির প্রকৃত মালিকদের সমন্বয়ে উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক পিআইসি গঠনের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও গঠিত পিআইসির সভাপতিদের কোন বাঁধের নিকটবর্তী এলাকায় জমি নেই। এমন অভিযোগ এনে খালিয়াজুরীর শফিকুল ইসলাম তালুকদার নামে এক কৃষক চলতি মাসের ১৬ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে ও ১৭ এপ্রিল নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকালের দিকে অভিযোগ দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে অভিযোগকারী বলেন, পিআইসি কমিটি গঠন করার পরপরই অভিযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও ইউএনও ও পাউবোর কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ঘুরাঘুরি করে গত ৬ এপ্রিল গঠিত পিআইসিগুলোর কাগজপত্রাদি হাতে পেয়েছি। তালিকা পর্যালোচনা করে দেখি গঠিত পিআইসিসমূহ হাওর এলাকায় পাউবোর ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত, নদী/খাল পুনঃখননের জন্য স্কীম প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ এর পরিপন্থী। প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও ও তার অফিস সহকারি মো. মোশারফ হোসেন (ইজাহারুল), সদস্যসচিবগণ এবং পাউবোর দুজন কার্যসহকারি এনামুল হক ও সোহেল মিয়া একে অন্যের যোগসাজসে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিআইসিগুলো গঠন করে এগুলোর সভাপতি নির্বাচন করেন।

এমন এক ব্যক্তিকে পিআইসির সভাপতি করা হয়েছে নিজেই জানেন না এবং তার নামে ব্যাংকে হিসাবও খোলা হয়েছে সেটাও জানেন না তিনি। আবার দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য বিছানায় শষ্যাশায়ী ব্যক্তি কীভাবে প্রকল্প এলাকার কাজ পর্যবেক্ষন করবেন এমন লোককেও পিআইসির সভাপতি করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প এলাকার আওতাভুক্ত প্রকৃত জমির মালিকানা কৃষকরাই হবেন পিআইসির সভাপতি। পিআইসি গঠনের আগে প্রকল্প এলাকার কৃষকদের মাইকিং করে গণশুনানি মাধ্যমে পিআইসি গঠনের নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি এমনটাই দাবী অভিযোগকারীর।

অভিযুক্তের তালিকায় গঠিত বিভিন্ন পিআইসির সভাপতিগণ হলেন- বিধান কৃষ্ণ সরকার, সজল দে, মন্টু চক্রবর্তী, ফকরুল আলম, সুপ্রদীপ সরকার, ফুল মিয়া, রথীন্দ্র বর্মন, সন্তোষ বিশ্বাস, অঞ্জন সরকার, ফকরুল ইসলাম, ঝুটন সরকার, তাজুল ইসলাম, ফেরদৌস আলম, আশিকুর রহমান (ডেন্ডু), মোকশোদ মিয়া, আহাদ নুর, আনোয়ার হোসেন, কবিন্দ্র সরকার, সুচিত্রা তরফদার, হারুণ মিয়া, নিরঞ্জন চন্দ্র দাস, আবুল কালাম, কামরুল ইসলাম তালুকদার, নাজরুল ইসলাম জলিল, প্রাণেশ সরকার ও আবু বকর।

জানা যায়, খালিয়াজুরীর মেন্দিপুর ইউনিয়নের নাউটানা উপ-প্রকল্প, সদর ইউনিয়নে কীর্ত্তণখোলা বেরিবাঁধ, ছাতিয়ার হাওরের ফসলরক্ষা বেরিবাঁধ, মনাইজান কালিপুর থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প পর্যন্ত এবং নগর ইউনিয়নের মূলদাইয়ের বাঁধ, কাওয়ারবাধা ও পাইত্‌লাধোয়া হাওরের ফসল রক্ষা ডুবন্ত বাঁধের ভাঙন বন্ধকরণ ও মেরামত কাজসহ বিভিন্ন বাঁধের সংস্কার কাজ করা হয়। এ উপজেলায় বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও মেরামতের জন্য ১১৫টি পিআইসির অনুকূলে ২৫ কোটি ২৩ লাখ বরাদ্দ এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এসমস্ত কাজ গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরে ২৮ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়।

অভিযোগে উল্লেখ, খালিয়াজুরীর বানিয়াপাড়া গ্রামের রবীন্দ্র দাসের ছেলে মোহনবাসী দাস এফসিডি ২নং পোল্ডারের ৪নং পিআইসির সভাপতি। তিনি খালিয়াজুরী বাজার ও খাদ্যগুদামে দিনমজুরী কাজ করেন। প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। তার নামে সোনালী ব্যাংক খালিয়াজুরী শাখায় হিসাবও খোলা হয়েছে সেটাও জানেন না। সেখানে ছয় লক্ষ ৭৩ হাজার টাকার ভৌতিক লেনদেন হয়েছে। আশিকুর রহমান (ডেন্ডু) গৃহহীন দুস্থ মানুষ তিনিও পিআইসির সভাপতি। গৃহহীনদের তালিকাভুক্ত হয়ে হেমনগরকান্দা আশ্রায়ন প্রকল্পে জমির মালিকানা বন্দোবস্ত পান তিনি।

উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হ্যাপী রায়ের স্বামী বিধান কৃষ্ণ সরকার নাউটানা উপ-প্রকল্প পিআইসি নম্বর নাউ-১ এর সভাপতি। প্রকল্প এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে তার জমি নেই। সজল দে ৫নং পিআইসির সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুমন চক্রবর্তীর ফটোষ্ট্যাট দোকানের কর্মচারী। সুমন চক্রবর্তীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল ও শষ্যাশায়ী মন্টু চক্রবর্তী তিনিও ১২নং পিআইসির সভাপতি।

খালিয়াজুরী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বাগত সরকারের বাবা সুপ্রদীপ সরকার ৮নং পিআইসির সভাপতি। তার বাড়ি প্রকল্প এলাকা হতে ১৫ কি.মি. দূরে এবং প্রকল্প এলাকার ভোটার ও কৃষক নন তিনি। স্বাগত সরকারের কাকাতো ভাই ঝুটন সরকার রিকশাচালক হয়েও ৩১নং পিআইসির সভাপতি হন। একই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদের বাবা হারুণ মিয়ার প্রকল্প এলাকায় জমি না থাকলেও তাকে করা হয়েছে পিআইসির সভাপতি।

৬নং পিআইসির সভাপতি ফকরুল ইসলাম খালিয়াজুরী সদর ইউপি আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি আমানিপুর প্রকল্প এলাকা হতে ১৫ কি.মি. দূরে। ফুল মিয়া ২নং পোল্ডারের ৯নং পিআইসির সভাপতি। তার বাড়ি আমানিপুর গ্রামে ও প্রকল্প এলাকা থেকে ১৫ কি.মি. দূরে। রথীন্দ্রবর্মন ১০নং পিআইসির সভাপতি। তিনি কীর্ত্তণখোলা, কাঠালজান ফিসারি ও মালতি মৎস্য আড়তের ম্যানেজার। তার প্রকল্প এলাকায় এক শতাংশ ভূমি নাই। মন্তোষ বিশ্বাস দিনমজুর ও ভূমিহীন হয়েও ১১নং পিআইসির সভাপতি। স্যাটেলাইট ক্যাবল অপারেটর অঞ্জন সরকার ১৫নং পিআইসির সভাপতি। প্রকল্প এলাকায় তার কোন জমি নাই।

ফখরুল ইসলাম খালিয়াজুরী উপজেলা ছাত্রলীগের এক নম্বর যুগ্মআহবায়ক। তারও প্রকল্প এলাকায় কোন জমি নেই ও প্রকল্প এলাকা থেকে আনুমানিক ৮-১০ কি.মি. দূরে তার বাড়ি। তাজুল ইসলাম ডিচ ফিলিং কাজের ৩২নং পিআইসির সভাপতি। তার বাড়ি প্রকল্প এলাকা থেকে আনুমানিক ৮-১০ কি.মি. দূরে। দিনমজুর ফেরদৌস আলী ডিস ফিলিং কাজের ৩৩নং পিআইসির সভাপতি। তার আপন ভাজিতা ডিস ফিলিং কাজের ৩৪নং ও আপন ভাগিনা ৩৫নং পিআইসির সভাপতি।

আহাদ নুর ও আনোয়ার হোসেন নামে দুই পিআইসি সভাপতির প্রকল্প এলাকায় তাদের কোন জমি নাই। কবিন্দ্র সরকার ও সুচিত্রা তরফদার নামে পিআইসির আরও দুজন সভাপতি তাদেরও বাড়ি প্রকল্প এলাকা থেকে আনুমানিক ১৫ কি.মি. দূরে। দিনমজুর নিরঞ্জন চন্দ্র দাস নামে এক পিআইসির সভাপতিসহ অন্যান্য পিআইসির সভাপতি আবুল কালাম, কামরুল ইসলাম, নাজরুল ইসলাম জলিল ও প্রাণেস সরকার তাদেরও প্রকল্প এলাকায় কোন জমি নেই।

আবু বকর ইউএনও সাহেবের অফিস সহকারি ইজাহারুলের যোগসাজশে উপজেলার সরকারি পাবলিক লাইব্রেরী হলে ডেকোরেশনের মালামাল রেখে ব্যবসা পরিচালনা করার সুবাধে তাকেও ১নং পোল্ডারের ৫নং পিআইসির সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়াও মনোহারী ব্যবসায়ী, বাজার কমিটির নেতার নাম সভাপতি হিসেবে পিআইসিতে বিদ্যমান। প্রকল্প কমিটির বেশিরভাগ সভাপতির সঠিক ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংযুক্ত নেই। যা নীতিমালা পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন অভিযোগকারী।

এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান। পাউবোর উপসহকারি প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়নে উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাদের নাম অভিযোগে আনা হয়েছে। প্রকল্পের জন্য কমিটি গঠনে আমাদের এখতিয়ার নেই।

খালিয়াজুরী ইউএনও রুয়েল সাংমা জানান, মাইকিং করে প্রচারের মাধ্যমে গত নভেম্বর মাসে নীতিমালা অনুযায়ী পিআইসি গঠন করা হয়েছে। সে সময় কোন অভিযোগ আসেনি। ধান কাটা শেষে এখন অভিযোগ আসলো। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। অভিযোগকারী প্রমাণ করুক। আমরাও প্রস্তুত আছি।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, এ বিষয়ে দুদকের দেওয়া অনুলিপি পেয়েছি। বিষয়টি দুদকই দেখবে। আমার কাছে দেওয়া অভিযোগের কপি এখনও পায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version