অনলাইন ডেস্ক: বিএনপি এদেশের মানুষের মঙ্গল চায় না, ভালো চায় না মনে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘৭৭ সালে যাদের হত্যা করেছে, ৭৫ সালের পর থেকে যাদের হত্যা করা হয়েছে, মানুষ তো এগুলো ভুলে যাচ্ছিল। কাজে এটা যে আজকে মানুষের সামনে আসছে, যে জিয়াউর রহমান কি অপরাধ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জিয়া যেমন করল, তার বউ করল এবং তার ছেলেরা মিলে পরে করল এই অগ্নি সন্ত্রাস। এরা এদেশের কোনো মঙ্গল চায় না, এরা এদেশের মানুষের কোনো ভালো চায় না। এটা হলো বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আমার আব্বা সারাজীবন কষ্ট করে গেছেন। তাই আমার একটাই চেষ্টা এদেশের মানুষ যেন একটু ভালো থাকে। আজকে মানুষ যখন একটু ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছে, একটু অর্থনৈতিক ভাবে স্বচল হচ্ছে ঠিক সেই সময় আবারও অগ্নিসন্ত্রাস, মার্কেটে আগুন, নানাভাবে মানুষকে ক্ষতি করা। এটা যারা করে এদের প্রতি জাতির ঘৃণা। আমার মনে হয়, আল্লাহ সহ্য করবে না। এরা যে অপরাধ করেছে তাদের বিচার হবে।’
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে গণভবনে ‘৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলের সময় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের স্বীকার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের ক্ষতিগ্রস্থ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঈদপূর্ববর্তী মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে শুরুতে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সময় কীভাবে বিনা বিচারে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সে সময় হত্যার শিকার কয়েকজনের পরিবারের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাদের পিতা হত্যার বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া আন্দোলনের নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের ওপর নির্মিত আরেকটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
সেই সময়ের কয়েকজন ভুক্তভোগি প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য রেখে এই ঘটনার বিচার চান। অনুষ্ঠান শেষে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন ব্যবসায়ীও ছিলেন।
‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর থেকে শুরু হওয়া হত্যাকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন বিরোধী দলে ছিলাম এমন একটা দিন নাই যে লাশ টানতে হয়নি। আওয়ামী লীগের অগুণিত নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এরপরও কী করে এদের পাশে লোক থাকে? আমি বুঝে উঠতে পারি না।
২০১৩ সালের পরবর্তী সময়ের অগ্নিসন্ত্রাসের দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আর অগ্নিসন্ত্রাস, একটা জীবন্ত মানুষকে কীভাবে পোড়ানো যায়? এদের কোনো অপরাধ নেই। বুঝলাম আওয়ামী লীগের যারা রাজনীতি করেছে তাদের তারা মেরেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর এই জলুম অত্যাচার কেন।’
সম্প্রতি বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগান ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আবার এখন দেখেন, কয়েকদিন ধরে মার্কেটে আগুন। হঠাৎ করেই যেন মার্কেটে আগুন লাগাটা বেড়ে গেলো। তারপর হঠাৎ করেই আমার মনে সন্দেহ লাগলো এটাও কি নাশকতা নাকি? যারা গাড়িতে আগুন দিয়ে, বাসে আগুন দিয়ে, রিকশায় আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পোড়াতে পারে, এরা মানুষের ক্ষতি করাটায় জানে। ঈদের সময় মানুষ একটু ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে, সেই পথটাও যেন তারা বন্ধ করে দিতে চায়। আমার তো মনে হয়, এখানেও কিছু একটা ঘটনা আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আপনজন হারিয়ে কষ্ট করে বড় হয়েছেন, শুধু এটুকু বলতে পারি তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নাই। আমি আপনাদের মতো বিদেশে বোনকে নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে অসহায়, হঠাৎ একদিন দেখলাম আমার কেউ নেই। ছয় বছর রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে আমাদেরকে। কাজে আমরা কষ্টটা বুঝি।’
বিচারের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু এটুকু বলব, যারা এই অন্যায় করেছে তারা কিন্তু শাস্তি পাবে, শাস্তি পেয়েছে, পাচ্ছে পাবে। সেটা আমরা করব।’
নিজেকে স্বজনহারা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমিতো একজন স্বজনহারা, তাই আমি চিন্তা করলাম যারা আমার মতো স্বজনহারা তাদের সাথে একটু মতবিনিময় করব, দেখা করব সেজন্যই আপনাদেরকে কষ্ট করে ডাকা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আমার আব্বা সারাজীবন কষ্ট করে গেছেন। তাই আমার একটাই চেষ্টা এদেশের মানুষ যেন একটু ভালো থাকে। আজকে মানুষ যখন একটু ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছে, একটু অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে, ঠিক সেই সময় আবারও অগ্নিসন্ত্রাস, মার্কেটে আগুন নানাভাবে মানুষকে ক্ষতি করা। এটা যারা করে এদের প্রতি জাতির ঘৃণা। আমার মনে হয় আল্লাহ সহ্য করবে না। এরা যে অপরাধ করেছে তাদের বিচার হবে। আর দিনের পর দিন ফাঁসির ঘটনা আমরা বিদেশ থেকেই এই খবরগুলো শুনতাম। জেলখানাতে চার নেতাকে হত্যা করল।
‘কোন অপরাধ নেই জানে, তারপরও ধরে নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দেওয়া। সেই পাকিস্তানিবাহিনী যেমন বর্বরতা চালিয়েছিল এই বিএনপি জামায়াতও একই বর্বরতা এবং জিয়াউর রহমান তো হাসতে হাসতে নাকি ফাঁসির রায় লিখতো। কোন বিচার নাই। ফাঁসি দেওয়া হয়ে গেছে, বিচারের রায় বের হয়েছে পরে। কী জুলুম, কী অত্যাচার, কী অন্যায়।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘৩৫ বছর লেগেছে আমার বাবা-মার হত্যার বিচার করতে। কারণ আইন করে দিয়েছিল। আমি দেশে ফিরে আসলাম, আমি মামলা করতে পারবো না, বিচার চাইতে পারবো না। সেই খুনিদের এভাবে রেহায় দেওয়া হয়েছিল। আমরা সরকারে আসার পর ইন্ডিমেনিটি বাতিল করে বিচার করতে গেছি সেখানেও তো কত বাধা। জজসাহেবরা রায় দিতে যেতে পারে না, বোমা মারে। হরতাল যাকে, অনেক জজসাহেবরা বিব্রতবোধ করে। এটাও আমাকে দেখতে হয়েছে। যেখানে এতোগুলো মানুষ হত্যা হলো তার বিচারের রায়টা দিতেও তারা লজ্জ্বাবোধ করে। আমি আপনাদের কষ্টা বুঝি, কারণ আমিও তো একই কষ্ট পেয়েছি। যেটুকু পারি আমি আমার তরফ থেকে করে যাব।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুর সোবহান গোলাপ।
টিএমবি/এইচ