মোঃ লাতিফুর রহমান, পীরগঞ্জ প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ১২ বছর বয়সী এক কিশোর কে গোয়াল ঘড়ে বাঁশের খুটির সাথে হাত-পা বেঁধে চার দিন ধরে মাটিতে ফেলে রেখে অমানবিক নির্যাতন করার অভিযোগে পিতা এবং সৎ মা কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার সকালে থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের সিন্দুর্না গ্রামের আব্দুল খালেক পেশায় একজন রাজ মিত্রি। বিয়ে করেন সাহেরা খাতুনকে। তাদের সংসারকালে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। কন্যা লাবনি আক্তার বিয়ের পর মারা যান। পুত্র সাহাবুদ্দিনকে রেখে প্রায় ৮ বছর আগে মারা যান সাহেরা খাতুন। এদিকে সাহেরার সাথে সংসার করা কালে আমিনা নামে আরো একজনকে বিয়ে করেন আব্দুল খালেক। তার গর্ভেও এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান জন্ম হয়। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই সাহাবুদ্দিন তার পিতা খালেক এবং সৎ মা আমিনার সংসারে নানান প্রতিকূলতার সাথে বড় হতে থাকে।
স্থানীয়রা জানায়, সাহাবুদ্দিনকে তার পিতা খালেক এবং সৎ মা আমিনা বেগম কারণে অকারণে প্রায়ই মারপিট করত। ঠিক মত খাবার দিত না। অমানবিক নির্যাতন করত। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয় সাহাবুদ্দিনকে। কয়েকদিন ধরে সাহাবুদ্দিনের কোন খোঁজ খবর না পেয়ে তার মামতো ভাই আনোয়ার হোসেন গত শনিবার তার খোঁজে সাহাবুদ্দিনের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, গোয়াল ঘড়ের ভিতরে একটি বাঁশের খুটির সাথে হাত-পা বেঁধে সাহাবুদ্দিনকে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে। আশ পাশের লোকজনের সহায়তায় সাহাবুদ্দিনকে ঐ অবস্থায় থেকে উদ্ধার করেন আনোয়ার। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কেন্দ্রে এনে চিকিৎসা করান এবং থানায় এজাহার দায়ের করেন।
আনোয়ার হোসেন জানান, সাহাবুদ্দিন তাকে জানিয়েছেন, চার দিন ধরে তাকে খুঁটির সাথে ঐ অবস্থায় হাত-পা বেঁধে মাটিতে ফেলে রাখা হয়। এসময় তাকে খেতে দেওয়া হয়নি। ক্ষুধার জ¦ালায় মাটি খেয়েছেন সাহাবুদ্দিন। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পরনের কাপড়েই প্রসাব-পায়খানাও করেছেন নির্যাতিত ঐ কিশোর।
এ ঘটনায় একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে তৎপর হয়ে উঠেন পুলিশ প্রশাসন। তারা বিষয়টির খোঁজ খবর নেন এবং জরুরী ভাবে পদক্ষেপ নেন। অভিযান চালিয়ে রবিবার ভোর রাতে ঐ কিশোরে পিতা আব্দুল খালেক ও সৎ মা আমিনাকে গ্রেপ্তার করেন।
পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখ জনক। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তারা শিশুটির পিতা এবং সৎ মাতা কে গ্রেপ্তার করেছেন। আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
টিএমবি/এইচএসএস