স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনা খালিয়াজুরী উপজেলায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচীর ৩৫৪ বস্তা অর্থাৎ ১৭ টন ৬৭৫ কেজি চাল রাতের আধারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান রব্বানী জব্বারের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ড্রাম ট্রাকে করে নৌকায় উঠানোর জন্য ধনু নদীর পাড়ে নিয়ে আসা হয় এসব চালের বস্তা।
স্থানীয়রা ইউএনওকে বিষয়টি তাৎক্ষনিক জানালেও তিনি তড়িৎ কোন পদক্ষেপ নেননি। পরে রাত ১১টার দিকে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও পুলিশকে জানালে চাল জব্দ করে থানা-পুলিশ। সহকারি কমিশনার (ভূমি) সামিন সারোয়ার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে দুই সপ্তাহের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন চালের ক্রেতা লুৎফর মিয়াকে এবং জরিমানকৃত অর্থও আদায় করেন তিনি।
জানা যায়, কাবিখা কর্মসূচীতে কাজ করবে, খাদ্য নিবে। এই খাদ্য বাহিরে বিক্রি করার বিধান নেই। কাবিখার আওতায় প্রকল্পে উপকারভোগীদের কয়েকদিন অন্তর অন্তর মাস্টাররোল তৈরি করে বিতরনের নিয়ম রয়েছে। অথচ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচীর উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক জব্দকৃত এসব চালের বিপরীতে উত্তোলনের ছাড়পত্র প্রদান করে।
এসব ছাড়পত্রের অনুকুলে বিভিন্ন প্রকল্পের পিআইসির সভাপতি হিসেবে জড়িতদের তালিকায় উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, কবীর হোসেন ও শামীম মিয়া এবং নগর ইউপির সদস্য নমিতা রানীর নাম সামনে এসেছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ একমাস ও তার আগে বরাদ্দকৃত চালের বিপরীতে এসব প্রকল্পগুলোর কাজই করা হয়নি। কীভাবে আগের মাসের ছাড়পত্র অনুযায়ী সরকারি বন্ধের দিন রাতের বেলায় খাদ্য গুদাম থেকে চাল বাহির করা যায় কিনা? এসব বিষয়ে উপজেলা না, জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত চান এলাকাবাসী।
জব্দকৃত চালের ক্রেতা লুৎফর রহমান ভ্রাম্যমান আদালতকে জানায়, উপজেলা চেয়ারম্যান রব্বানী জব্বারের কাছ থেকে চাল ক্রয় করেছেন। কৃষি ব্যাংক খালিয়াজুরী শাখা চেয়ারম্যানের ভাতিজার হিসাবের অনুকূলে চালের মূল্যও পরিশোধ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন জানান, ‘কাবিখার প্রকল্পগুলোর চাল পিআইসির সভাপতিরা বিক্রি করে দেন মুরশেদের কাছে। মুরশেদ গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর গুদাম থেকে উত্তোলন করেন। সে (মুরশেদ) কোথায় বিক্রি করেছে তা জানা নেই। পিআইসির সভাপতিরা বিক্রি করে দিলে আমাদের করার কিছু থাকে না।
৩৫৪ বস্তা চাল জব্দের সত্যতা নিশ্চিত করে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. সামিন সারোয়ার জানান, ঘটনা ঘটেছে রাত ৮টায়। আমি অবগত হয়েছি রাত সাড়ে ১১টায়। চাল ক্রেতা লুৎফর মিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রব্বানী জব্বারের কাছ থেকে চাল ক্রয় এবং চেয়ারম্যানের ভাজিতার ব্যাংক হিসাবে অর্থ পরিশোধের কথা স্বীকার করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থা আইন ২০১২ অধীনে চালের ক্রেতাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে দুই সপ্তাহের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান এবং এই অর্থ আদায় করার কথা জানান তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান রব্বানী জব্বারের মোবাইলে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। একবার ফোন ব্যাক করলেও রিং বাজার সাথে সাথে সংযোগ কেটে দেন। পরে অনেকবার কল করার পরেও তিনি ফোন ধরেননি।
খালিয়াজুরীর ইউএনও রুয়েল সাংমা জানান, ‘খালিয়াজুরীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না, তাই সময় লেগেছে। পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ত্রুটি হয়নি। তদন্ত করে দেখি কারা জড়িত আছে’। জড়িতদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম শোনা যাচ্ছে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, খতিয়ে দেখা হবে।