সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাড়ে ৪ হাজার হজযাত্রীর কোটা ফাঁকা রেখেই চলতি বছরের হজ নিবন্ধন শেষ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বুধবার (৫ এপ্রিল) ছিল হজ নিবন্ধনের শেষ দিন। সাত দফা সময় বাড়ানোর পর নিবন্ধনের সময় আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারিতে ফাঁকা কোটা বেসরকারি এজেন্সিগুলোতে দিয়ে পূরণ করানো উদ্যোগ হজযাত্রীর অভাবে ভেস্তে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।হজ নিবন্ধন পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, বেসরকারিতে প্রাপ্ত কোটার সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮। এরমধ্যে হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৯ হাজার ১৮২ জন। বাকি ৩ হাজার ২৩৭ জনের মধ্যে ৭০০ মোনাজ্জেম, ২ হাজার ৫৩৭ জন গাইড হজযাত্রীর সঙ্গে যাবেন। সব মিলিয়ে বেসরকারিতে কোটা পূরণ হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারিতে এবার কোটা ১৫ হাজার। এরমধ্যে হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৯ হাজার ৯৩৯ জন। গাইড ২৫০, রাষ্ট্রীয় খরচে হজে যাবেন ২০০ এবং সংরক্ষিত ১০০ জন। সব মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ৪৮৯ জন। সে হিসেবে সরকারিতে এখনো ফাঁকা রয়েছে ৪ হাজার ৫১১ জন।
জানা গেছে, শুরু থেকেই সরকারিতে নিবন্ধনের কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছিল না। পরে সরকারিতে ফাঁকা কোটা বেসরকারি এজেন্সিগুলোকে দিয়ে পূরণ করার উদ্যোগ নিলেও হজযাত্রীর অভাবে তা ভেস্তে যায়। এজেন্সিগুলো জানায়, তাদের হাতে পর্যাপ্ত হজযাত্রী নেই।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, শুরু থেকেই সরকারিভাবে নিবন্ধন করতে অনাগ্রহী ছিল হজযাত্রীরা। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার ফাঁকা রেখেই নিবন্ধনের কাজ শেষ করতে হচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের একটি টিম সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার চুক্তির প্রাথমিক কাজ শেষ করে এসেছেন। খুবই শিগগিরই হজ অফিস বাড়ি ভাড়ার চূড়ান্ত চুক্তি করবে। তাই আর নিবন্ধনের সময় বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে বুধবার যারা ব্যাংকের টাকা জমা দিয়েছে তাদের ভাউচারগুলো আজকের জন্য শুধু ব্যাংকগুলোকে সময় দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন বলেন, সরকারিতে যা ফাঁকা রয়েছে সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারিতে ফাঁকা আসন বেসরকারি এজেন্সিগুলো দিয়ে দেওয়ার আলোচনা ছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বেসরকারি এজেন্সিগুলো নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কারণ তাদের কাছে আর কোনও হজযাত্রী নেই বলে আমাদের জানিয়েছেন।
হজ এজেন্সিগুলো মালিকরা বলছেন, চলতি বছর চলতি মৌসুমে হজ প্যাকেজের খরচ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এর মধ্যে দফা দফায় সময় বাড়িয়েও হজযাত্রী পাচ্ছে না। এরই মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে আগামীতে হজের খরচ আরও বাড়বে।
মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং সৌদি আরবের হারাম শরীফের নিকটবর্তী বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলায় এ বছর হোটেল ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং অধিক পরিমাণ অর্থ দিয়ে হোটেল ভাড়া করা হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় বিভিন্ন কারণে এ বছর হজ প্যাকেজকে হ্রাসকৃত প্যাকেজ হিসেবে ধরা যায়।
একই ধারাবাহিকতায় বলা যায়, আগামী বছরগুলোয় হজ প্যাকেজের মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ, ভেঙে ফেলা বাড়ি/হোটেলসমূহ আবার গড়ে তুলতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হজযাত্রীদের এ বছরই হজ প্যাকেজে নিবন্ধিত হওয়ার অনুরোধ জানান ধর্ম মন্ত্রণালয়।
হজ এজেন্সিগুলো বলছে, সৌদি সরকার থেকে পাওয়া নির্ধারিত কোটা পূরণ করে হজযাত্রী পাঠাতে না পারলে আগামীতে এ সংখ্যক কোটা পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে। তাই কোটা পূরণ করতে এখন বেশ তৎপর মন্ত্রণালয়।
টিএমবি/এইচ