অনলাইন ডেস্ক: ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকার লাগোয়া বেশ কয়েকটি মার্কেট। আগুনে বঙ্গবাজার অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই বাজারটি বাংলাদেশে পাইকারি কাপড়ের অন্যতম প্রধান একটি মার্কেট।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এরপর থেকে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বিধ্বংসী এই অগ্নিকাণ্ডের খবর দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রয়টার্স, এপি, আলজাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান ও সিজিটিএন, ডেকান হেরাল্ড, আল আরাবিয়া নিউজ, আরব নিউজ, হিন্দুস্তান টাইমস-সহ প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা ও সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) শিরোনাম করেছে ‘ফায়ার রেসেস থ্রু ক্লদিং মার্কেট ইন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল’। তাদের সূত্র ধরে একই খবর প্রকাশ করেছে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, এবিসি নিউজ, ইউএস নিউজ।
বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ে ভিডিওসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। তাদের বরাতে একই খবর প্রচার করছে ইনকোয়ারার, ব্যারনস, দুবাইভিত্তিক গণমাধ্যম আল-অ্যারাবিয়া, আবুধাবির ইংরেজি দৈনিক দ্য ন্যাশনাল প্রভৃতি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সচিত্র প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘ফায়ার ফাইটারস, আর্মি ওয়ার্ক টু ডজ ম্যাসিভ ফায়ার ইন বাংলাদেশ’। একই খবর প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টাইমস প্রভৃতি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বঙ্গবাজারের খবর নিয়ে শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশ ফায়ার: হান্ড্রেসস অব ফায়ারফাইটারস ট্যাকল ব্লেজ ইন হিউজ ঢাকা ক্লদিং মার্কেট’।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরের শিরোনাম ‘মেজর ফায়ার এ পপুলার ক্লদিং মার্কেট ইন বাংলাদেশ’।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি ‘ম্যাসিভ ফায়ার গাটস থাউজেন্ডস অব শপস ইন বাংলাদেশ মার্কেট’ নামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এছাড়াও ভারতের এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, ডেকান হেরাল্ড, বিজনেস স্ট্যার্ন্ডাড, ট্রিবিউন ইন্ডিয়া, বার্তা সংস্থা আইএএনএস, বার্তা সংস্থা পিটিআই, পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডন বঙ্গবাজারে আগুনের খবর প্রকাশ করেছে।
কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘ঢাকার বঙ্গবাজারে বিধ্বংসী আগুন, ঘটনাস্থলে দমকলের ৫০টি ইঞ্জিন, পুড়ে ছাই বহু দোকান’।
সংবাদ প্রতিদিন বলছে, ‘ঈদের আগে ঢাকার বঙ্গবাজারে বিধ্বংসী আগুন, পুড়ে ছাই ৫০০০ দোকান’। এই সময়ের শিরোনাম ‘ফের ঢাকার বঙ্গবাজারে বিধ্বংসী আগুন, পুড়ে ছাই ৫০০০ দোকান’।
জি নিউজের খবরের শিরোনাম করা হয়েছে ‘ভয়াবহ আগুনে ৪০০০ দোকান পুড়ে ছাই! ঘন কালো ধোঁয়া আর কান্নায় ভারী এলাকার বাতাস…’।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এই আগুন লাগার তথ্য পাওয়া যায় বলে ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেখানে চার হাজারের বেশি দোকান আছে। মূলত বঙ্গবাজার পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের জন্য বাংলাদেশের প্রধান ও পরিচিত মার্কেটগুলোর একটি।
এদিকে আগুনের ঘটনা জানার পর ঢাকা এবং আশপাশের জেলার সবগুলো ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট সেখানে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে নিযুক্ত হয়।
আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটও। দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় বঙ্গবাজার ও আশপাশের কয়েকটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা গেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সম্মিলিত সাহায্যকারী দল পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারও ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দুর্বল পর্যবেক্ষণ এবং যথাযথ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবের কারণে বাংলাদেশের বহু বাণিজ্যিক স্থানে প্রায়ই আগুন লেগে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত গত এক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নয়ন হয়েছে।
যদিও বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড-সহ অতীতে অনেকবারই বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশের এই শিল্পখাত।
টিএমবি/এইচ