স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনা আটপাড়ার শুনই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রোকনউজ্জামানের (রোকন) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ইউপির ডিজিটাল সেন্টারের এক নারী উদ্যোক্তাকে (৩৩) কুপ্রস্তাব প্রদানের। চেয়ারম্যান ওই নারীকে ময়মনসিংহের একটি ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে যেতে এবং ইউপি সচিবের বাসায় যাওয়ারও প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে উদ্যোক্তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি এবং একপর্যায়ে ইউপি পরিষদ থেকে বের দেন চেয়ারম্যান।
এমন অভিযোগে সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুরের দিকে সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের দুজনের বক্তব্য নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা চেয়ারম্যানের সাথে তাদের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড প্রতিবেদককে শোনান। পরে তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে ১২ বছর যাবত সুনাম ও সততার সাথে কাজ করি। বিগত চেয়ারম্যানদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়নি। নতুন চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামন দায়িত্ব নেবার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি হয়রানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দেন। প্রথম প্রথম ভাবতাম পরীক্ষা করছে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। দিন যত গড়াচ্ছে বিষয়টা বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় ইউএনওকে মোখিকভাবে জানালে স্যার কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তাও জানা নেই। এক নারীসহ নতুন তিনজন উদ্যোক্তার মাধ্যমে কথোপথনসহ একাধিক গোপন প্রমানাদি থাকায় চেয়ারম্যান আমার মোবাইল নিয়ে নেন। মোবাইলের জন্য জিডি করলে তিনি (চেয়ারম্যান) থানায় ফোন দিয়ে বলেছে জিডি নিয়ে যাতে বাড়াবাড়ি না হয়। আমার বিরুদ্ধে তিনি দুইটি অভিযোগ করেছে যেন এই ভয়ে প্রস্তাবে রাজি হই। তাতেও চেয়ারম্যান ব্যর্থ হয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বরে ইউপি পরিষদ থেকে বের করে দেন।
এ সব বিষয়াদি নিয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ জেলা প্রাশসক, ইউএনও ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
তিনি আরও জানান, আমাকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার সময় তিনি ময়মনসিংহে একটি ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের কথা বলেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদে সচিবের মাধ্যমে সচিবে বাসায় যাওয়ারও প্রস্তাব দেন। সচিব আঙ্কেলকে বলেছি- হয় আপনি প্রতিবাদ করেন, না হয় বিষয়টা নিয়ে চুপ থাকেন। তখন সচিব আঙ্কেল আমার প্রতি রাগান্বিত হয়ে বলে চেয়ারম্যান আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে বলছি না কেন।
চেয়ারম্যান শুরুতেই যদি বলে দিতেন আমাকে উদ্যোক্তা হিসেবে রাখবেন না, সেটাই ভাল ছিল। হয়রানিসহ এমন মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো না- এমন আপেক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, তাঁর কাছে সম্মান ক্ষুন্নের ন্যায্য বিচার চান ভুক্তভোগী এই নারী উদ্যোক্তা।
চেয়ারম্যান মো. রোকনউজ্জামান (রোকন) জানান, ‘যড়যন্ত্র, মিথ্যা ও বানোয়াট। সে (নারী উদ্যোক্তা) লেনদেনে খুবই খারাপ ছিল। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আগেই লেখা হয়েছিল। রেজুলেশনের মাধ্যমে বাহির করে দেওয়া পর অভিযোগ করেছে।’ হোটেলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার রেকর্ডও আছে প্রতিবেদকের প্রশ্নে তিনি জানান, ‘তার রেকর্ড নিয়ে সে (নারী উদ্যোক্তা) বসে থাকুক। আপনি (প্রতিবেদক) জানেন না সে কি ধরনের ক্রিটিক্যাল প্রকৃতির লোক’।
আটপাড়ার ইউএনও মো. শাকিল আহমেদ জানান, এরকম একটা অভিযোগ জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিসে দাখিলের পর তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে ডিসি মহোদয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি (ডিসি) যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।