অভিনেতা, নির্দেশক ও সংগঠক মামুনুর রশীদের ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ মন্তব্য নিয়ে নেট দুনিয়ায় রীতিমত তোলপাড়। কেউ তার বক্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, আবার কেউ করছেন তুমুল সমালোচনা। শুধু সাধারণ নেটিজেন নয়, সংস্কৃতি অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও সাম্প্রতিক এই ইস্যু নিয়ে সোচ্চার। মামুনুর রশীদের বক্তব্যকে সময়পোযোগী দাবি করে কথা বলেছেন অনেক তারকা মুখও। তাদের একজন চঞ্চল।
তিনি বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঘাড়ে চেপে যখন অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকে, তখন আমরা অধিকাংশ মানুষই শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। এটি এখন আমাদের ব্রেইনের ওপর বিষফোঁড়াসম সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
এক ফেসবুক পোস্টে এসব কথা বলেন দেশের গুণী এই অভিনেতা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার প্রসঙ্গে অভিনেতার প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বাক স্বাধীনতার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ স্বেচ্ছাচারীর মতো যা খুশি করছে,যা ইচ্ছে বলছে। প্রশ্নটা এখানেই, আধুনিকতা আর সম-অধিকারের ঝাণ্ডা তুলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অপব্যবহার করছেন না?
তিনি বলেন, আপনার অরক্ষিত এই কার্যকলাপে, সমাজ বা নতুন প্রজন্ম কতটুকু প্রভাবিত হচ্ছে, সেটুকু ভাবার অবকাশ কি আপনার আছে? আপনি কি সত্যিই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করছেন? ছোটবেলায় পড়তাম বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ? বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে।
ফেসবুকের রিল অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। চঞ্চল চৌধুরী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম্যের সঠিক ব্যবহারই হয়তো জাতির জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারতো, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো রাখেও। কঠিন সত্য এটাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে যতটা না সামাজিক কর্মক্ষেত্র, তার চেয়ে অনেক গুন বেশী ব্যক্তিগত বাণিজ্য ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকে “REEL” নামক একটি বিষয় আছে। এখানে অধিকাংশই যে কতটা অশ্লীল, ভাবতেও অবাক লাগে!
অসচেতনতা বা সমর্থনের মাধ্যমেই ভাইরাল ব্যক্তি জায়গা করে নিচ্ছে বলে মনে করেন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধচারণ করি। সেন্সরবিহীন এসকল অশ্লীল কার্যকলাপ কে বন্ধ করবে? এখানে রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বা আইন শৃংখলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা কি আমরা আশা করতে পারিনা? সেই সাথে আপনার বা আমার অসচেতনতা অথবা সমর্থনের ভেতর দিয়ে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বিতর্কিত কিছু ভাইরাল ব্যক্তি।
এর ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, সে যখন আপনার কাছে পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব দাবি করবেন, আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না। কারণ আপনার বালখিল্য আচরণ, উদাসীনতা আর সস্তা বিনোদন প্রিয়তায় আপনি সেই সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আপনার অরক্ষিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারই এর জন্য দায়ী।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গলের কথা চিন্তা করার আহবান জানিয়ে অভিনেতা চঞ্চল আরও বলেন, আপনি কি আপনার সন্তানের কথা ভাবেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেন? যদি করেন, তাহলে অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারেও আপনাকে অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে।
চঞ্চল বলেন, তথাকথিত কিছু অসৎ রাজনীতিবিদদের কারণে যেমন রাজনীতি কলুষিত, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার বা আমার সমর্থনে গজিয়ে ওঠা ভাইরাল ব্যক্তিদের কারণে সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়। দায়ী আপনি বা আমি, দায়ী আমাদের নিম্ন মানসিকতা।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী তার পোস্টে আরও লিখেন, আপনি কাকে অনুসরণ করবেন বা সমর্থন দেবেন, বা কে হবে এই দেশে আপনার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আদর্শ, চূড়ান্ত ভাবনার এই সময় টুকুও বোধ করি পেরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার মতো হলেও, আমাদের সন্তানেরা ভবিষ্যতে অনুসরণ বা শ্রদ্ধা করার মতো কাউকে পাবেনা।
তিনি বলেন, পরিচিত হতে হবে আপনার রুচিতে জন্ম দেয়া কোন ভাইরাল বিনোদন ব্যক্তির উত্তরসুরী হিসেবে। কারণ আপনি বা আমি ঠিক বেঠিক বা উচিত অনুচিতের পার্থক্য ভুলে সস্তা বিনোদন প্রিয় জাতিতে পরিণত হয়ে গেছি। বুঝতে পারছেন কি সামনে কতটা অন্ধকার? চুপ করে থাকা রাজনীতিক, সংস্কৃতিবান এবং রুচিশীলদেরকে বলছি। প্রস্তুত থাকুন, আপনাকে যেকোনও উপায়ে টেনে হিঁচরে নিচে নামানো হবে, তাই এখনো সময় আছে। মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন।
দ্যা মেইল বিডি/এইচএসএস