গাইবান্ধা প্রতিনিধি:  নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং সংকটের কারণে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসার বদলে মিলছে ভোগান্তি । অবকাঠামো, শয্যা, চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজনীয় কোনোটিই নেই এই হাসপাতালে।
১৯৮৪ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হলেও কয়েক দফায় তা বৃদ্ধি পেয়ে উন্নীত করা হয়েছে ২৫০ শয্যায়। অথচ ৭ বছর ধরে ১০০ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি।
এতে বাড়ছে দুর্ভোগ-ভোগান্তি, অনিরাপত্তা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাসহ নানা অভিযোগ। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ২৬ লাখ মানুষ। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের দাবি, কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চেয়ে বারবার পত্র দিয়েও মিলছে না সমাধান। শুধু জনবল সংকটের কারণেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে চালু করা হয় গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল। পরবর্তী সময়ে জেলা বাসীর  দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৮ মে ২০০ শয্যা ও সর্বশেষ ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও হাসপাতালটি সাত বছর ধরে চলছে ১০০ শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়েই।
শুধু তাই নয়, ১০০ শয্যার জনবল কাঠামো হিসেবেও হাসপাতালটিতে ৪৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা কিন্তু সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন ২২ জন। দীর্ঘদিন ধরে ২১ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। বিশেষত সিনিয়র কনসালটেন্ট ইএনটি (নাক, কান, গলা) বিভাগে একজন, সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) বিভাগে দুজন, সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) বিভাগে দুজন, সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) বিভাগে দুজন এবং ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার পদে তিনজন থাকার কথা থাকলেও বিভাগগুলোতে দীর্ঘদিন থেকেই নেই চিকিৎসক। এ ছাড়া ১০০ শয্যা হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন খাতে কর্মচারীর পদসংখ্যা ১৮৮টি। এর মধ্যে ৬৩টি পদই শূন্য রয়েছে।
বুধবার  সকালে হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, একটি টিকিট কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন রোগী ও রোগীর স্বজনরা। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুসহ, নারী-পুরুষ গাদাগাদি করে নিচতলায় ও দোতলায় চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। চিৎকার-চেঁচামেচি আর গুমট পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। চিকিৎসা নিতে এসে দীর্ঘ সময় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
এ ছাড়া আন্তবিভাগে শয্যাসংকটে নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার বারান্দার মেঝেতে শয্যা পেতেছেন রোগীরা। চিকিৎসাধীন একজন রোগীর সঙ্গে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ করে স্বজন। ওয়ার্ডের ভেতরটা অপরিষ্কার। হাসপাতালের ভেতরে, বাইরে এমনকি ওয়ার্ডগুলোর মেঝেতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জানা রয়েছে। শিশু ওয়ার্ডেরও একই অবস্থা। নিচতলা ও দোতলার শৌচাগারগুলো অপরিচ্ছন্ন দেখা যায়।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এনালগ পদ্ধতির এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু করা হলেও রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে দালালদের সংখ্যাও। তাদের হাতে নিঃস্ব হচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিরীহ মানুষ।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি  মোঃ শরিফুল ইসলাম (৩৫) জানান গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমি গুরুত্বর আহত হলে আমাকে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয় কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন ।
গাইবান্ধা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম বলেন, যখন কোনো বিষয় শুধু ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায় তখনই তার বিপর্যয় দেখা দেয়। হাসপাতালটিতে জনবলসংকটের বিষয়টি বড় প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবলসংকট নিরসনের বিষয়টিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশীদারত্ব অত্যন্ত জরুরি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন বলেন, প্রতিদিন বহির্বিভাগে নতুন ও পুরোনো মিলে ১ হাজার থেকে ১২০০ জন রোগীকে সেবা দিতে হয়। গাইনি ও শিশুসহ ভর্তি থাকে ২৫০ থেকে ২৮০ জন রোগী। এ ছাড়া প্রায়ই ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যায়। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও জনবল ও অবকাঠামো সংকটে হাসপাতালটি পরিচালনায় নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। শূন্য পদ পূরণে দফায় দফায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হচ্ছে।
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version