ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
আসাদুজ্জামান নয়নসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মারধর, আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন, হত্যার হুমকি এবং মুক্তিপণ দাবি করায় মামলা হয়েছে। ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। নান্দাইল উপজেলা বনুড়া গ্রামের এক যুবক।
ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে নান্দাইল থানার ৫নং গাংগাইল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নয়নের বাড়ি। ঘটনার দিন ২৮ শে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল ৩ ঘটিকা হইতে সর্বশেষ ৩ মার্চ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত দুই যুবককে
নির্যাতন, হত্যার হুমকি এবং মুক্তিপণ দাবি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী মোঃ সোহেল রানা।
আসাদুজ্জামান নয়নের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবরে গাংগাইল এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার পরিস্থিতি দেখে আসাদুজ্জামান নয়ন,উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠরা দাবি করেছেন।
আসাদুজ্জামান নয়ন ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হচ্ছেন মোঃ হেলাল উদ্দিন হেবাল, মুন মিয়া,মোঃ লিমন মিয়া,মোঃ রনি মিয়া,মোঃ আব্দুস সাত্তার ও মোঃ রাফি মিয়া। সেই সাথে মামলায় ১৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবি এডভোকেট মাহাবুব আলী মামুন জানান, নির্যাতন, হত্যার হুমকি এবং মুক্তিপণ দাবি করার অভিযোগে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোহেল রানা বাদী হয়ে গত ১২ মার্চ মামলা রুজু করা হয়েছে। সি,আর মামলা নং ৮৪/২৩। মামলাটি সি,আই,ডি
কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।
মামলার অভিযোগে সুত্রে জানা যায়,,বাদী সোহেল রানা ও তার ভাই মোঃ হিরন মিয়া নান্দাইল রোড বাজার খাসি মহালে বাজার করার সময় মামলায় বর্ণিত আসামীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ঘিরে ধরে। তারা কারণ জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, “তোদের সাথে আমার বুঝাপড়া আছে।” পরে চেয়ারম্যানের হুকুমে তারা দুই ভাইকে মারধর করেন এবং বেঁধে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে একটি ঘরে ঢুকিয়ে তাদেরকে পিলারের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান নয়ন হকিস্টিক নিয়ে ঘরে ঢুকে তাদেরকে বেদম প্রহার করেন। মামলার অন্য দুই আসামী তখন হত্যার উদ্দেশে তাদের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করেন। এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, “বলেছিলাম আমার বিরুদ্ধে লাগিস না। আব্দুস সাত্তার নামে একজন ছুরি দিয়ে আঘাত করে পায়ের তালু কেটে ফেলে। নির্যাতিত দুই ভাই প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তাদেরকে বাড়িতে ফোনে যোগাযোগ করে ১০ লাখ টাকা নিয়ে এসে ছুটিয়ে নিয়ে যেতে বলেন চেয়ারম্যান।নির্যাতিতরা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ টাকা দিতে পারব না।” পরদিন খবর পেয়ে নির্যাতিত দুই ভাইয়ের মা এসে চেয়ারম্যানের কাছে ছেলেদের প্রাণ ভিক্ষা চান। মাকেও টাকা নিয়ে এসে ছেলেদের মুক্ত করে নিতে বলেন চেয়ারম্যান। আর এ ঘটনা থানা পুলিশকে জানালে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও হুমকি দেন চেয়ারম্যান ও তার সঙ্গীরা।
এদিকে থানায় ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ ১ মার্চ চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। পুলিশকে জানানো হয় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে একটি দরবার হয়েছিল। এ সময় দুভাইয়ের মুখ বাঁধা থাকায় তারা চিৎকার করতে পারেননি। এভাবে আরো একদিন কেটে গেলে সুনির্দিষ্ট খবর পেয়ে পুলিশ ৩ মার্চ শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে এসে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করেন। এর আগে তাদের কাছে থাকা ৩০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় চেয়ারম্যানের লোকেরা।
উদ্ধারের পর তাদেরকে চিকিৎসার জন্য পুলিশ নান্দাইল উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।নির্যাতিত যুবক মোঃ সোহেল রানা জানান, বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ না করে প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় বিষয়টি নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। আর অন্য আসামীদের সঙ্গে আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলছে।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, থানায় মামলা নেওয়ার বিষয়ে গড়িমসির তথ্যটি ঠিক নয়। আর এই মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে।সংশ্লিষ্টরা জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাদীর বক্তব্য নিয়েছেন। আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে। নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, আসাদুজ্জামান নয়নের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার ব্যাপারে পুলিশ অবগত রয়েছে।