মোঃ শাহ আলম। বাড়ী নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নে। যখন সে প্রথম শ্রেনীতে পড়ে তাদের ছেড়ে অন্যত্রে চলে যায় পিতা বাহার উদ্দিন। তারপর থেকে তাদের খোজও নেয় নি পিতা। মানুষের বাড়ীতে কাজ করে ছেলে শাহ্ আলম ও তার ছোট ভাইকে অনেক দুঃখে কষ্টে বড় করে তোলে তার মা শাহেলা বেগম। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে দুই ভাই পরিক্ষা দিয়ে নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন বড় ভাই শাহ আলম।
জলঢাকা উপজেলার বড়ঘাট এলাকার লাবিবা আক্তার। বাবা বেলাল হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রির হেলপার। তার বাবার তিনশ টাকার মজুরিতে অনেক কষ্টে চলে তাদের সংসার। ছোট থেকেই লাবিবার ইচ্ছা ছিল বাহিনীতে চাকরি করবে। কিন্তু সে জানতো টাকা ছাড়া হয় না চাকরি। তবুও সেসব কথা পিছনে ফেলে ১২০ টাকা দিয়ে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে আবেদন করে চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তির্ন হয়। উত্তির্ণ হয়েই পাল্টে গেছে তার চিন্তা চেতনা । সে এখন বিশ্বাস করে টাকা ছাড়াও চাকরি হয়।
কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বৈশাখী দাস। বাড়ী নীলফামারী সদর উপজেলার হাড়োয়া এলাকায়। তার বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ্য। করতে পারে না চলাফেরা। তার অসুস্থতার পর মা গৌড়ী দাস অনেক যায়গায় ছোটাছুটি করেও পান নি সংসার চালানোর মতে কোন চাকরি। মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে মেয়ে বৈশাখী দাসকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছেন। পুলিশে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে আবেদন করে বৈশাখী দাস। চুড়ান্ত পরীক্ষা উত্তির্ন হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন ভাবতে পারে নি মা গৌড়ী দাস। এখন তাদের সংসার স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে এতে খুশী মা গৌড়ী দাস।
কোনো রকম ঘুষ ও তদবির ছাড়াই নীলফামারীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৬৯ জন। শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ২ হাজার ৪১৫ জন চাকরি প্রত্যাশীকে পেছনে ফেলে তারা নিয়োগ পান। সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে নীলফামারী পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিকভাবে চুড়ান্ত উত্তির্ণদের নাম প্রকাশ করেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম। স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করায় নিয়োগপ্রাপ্তরা ও অভিভাবকরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম কে । এরকম নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামীতেও হবে বলে আশাবাদী তারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার সদস্য ও রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোছাঃ সুলতানা রাজিয়া, পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) কনক কুমার দাস, নীলফামারী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) আমিরুল ইসলাম, সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোআর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সহ আরো অনেকে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে আবেদনকারীর সংখ্যা ২হাজার ৪১৫জন। এর মধ্যে উপস্থিত ২হাজার ১৭৬জন চাকরী প্রত্যাশীদের মধ্যে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তির্ণ হয়ে নিয়োগ পান ৬৯জন। যার মধ্যে রয়েছে ৫৯জন পুরুষ ও ১০ জন নারী।’
নিয়োগপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগই বেশিরভাগই হতদরিদ্র ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কৃষক, অটোচালক, রিক্সা-ভ্যান চালক, দিনমজুর, শ্রমিক, দর্জি পরিবারের সন্তান। যাদের চাকরির জন্য টাকা দেওয়ার সামর্থ্য যেমন নেই, তেমনি সুপারিশেরও নেই কোনো লোক। মেধা ও শারীরিক পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা।
পুলিশ জানায়,‘ নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কৃষক পরিবারের ৩৭জন, চাকুরীজীবী পরিবারের ১৩জন ও শ্রমিক পরিবারে ১৯ জন রয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ কোটায় সাধারন ৪২জন, আনসার কোটায় ১জন, পোষ্য কোটায় ৬জন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১০জন সহ ৫৯ জন এবং নারী কোটায় সাধারন ৮জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১জন ও পুলিশ পোষ্য কোটায় ১জন সহ ১০ জন নিয়োগপ্রাপ্ত হন।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম বলেন, ‘স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই ৬৯ জন যুবক-যুবতীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত মেধাবীরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই নীলফামারী পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই।’