নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা কমছেই না। প্রতিনিয়ত সড়কে প্রাণ ঝরছে মানুষের। আহত মানুষের সংখ্যাটাও লম্বা হচ্ছে।
রোববার (১৯ মার্চ) ঢাকাসহ দেশের ৮ জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায়। সেখানে মর্মান্তিক এক বাস দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২০ জন। আহত হয়েছেন ১৫ জনের বেশি।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসচাপায় মারা গেছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। এছাড়া বগুড়ায় পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় দুইজন, ঢাকায় দুইজন এবং পিরোজপুর, মাগুরা, রংপুর এবং চুয়াডাঙ্গায় একজন করে মারা গেছেন।
মাদারীপুর: সকালে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন।
জানা যায়, সকালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এ ঘটনায় বাসটি দুমড়েমুচড়ে গেলে যানটির ২০ যাত্রী মারা যান।
শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকেই ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা যান। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যান।
নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন গোপালগঞ্জ গোপিনাথপুর এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া, বনগ্রাম এলাকার শামসুল শেখের ছেলে মোসতাক আহম্মেদ, সদর উপজেলার নশর আলী শেখের ছেলে সজীব শেখ, পাচুরিয়া এলাকার মাসুদ হোসেনের মেয়ে সুইটি আক্তার, টুঙ্গিপাড়ার কাঞ্চন শেখের ছেলে করিম শেখ, সদর উপজেলার আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি, মোকসেদপুর এলাকার আমজাদ আলীর ছেলে মাসুদ আলী, খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার শেখ মোহাম্মদ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, খুলনা সাউথ মেন্টাল রোড এলাকার চিত্তরঞ্জন ঘোষের ছেলে চিন্ময় প্রসুন ঘোষ, ডুমুরিয়া এলাকার পরিমল সাদু খায়ের ছেলে মহাদেব কুমার সাদু খা, আমতলা এলাকার শাহজাহান মোল্লার ছেলে আশফাকুর জাহান লিংকন, বাগেরহাট জেলার শান্তি রঞ্জন মজুমদারের ছেলে অনাদি মজুমদার, ফরিদপুর হিদাডাঙ্গা এলাকার সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল, নড়াইল লোহাগড়া এলাকার বকু শিকদারের ছেলে ফরহাদ শিকদার, বাসের চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলী আকবরের ছেলে জাহিদ হাসান ও বাস চালকের সহকারী মো. মিরাজ।
ময়মনসিংহ: জেলার ত্রিশাল উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
স্থানীয়, পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাত ৭টা ৪০ মিনিটে উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বইন্নার ব্রিজ এলাকায় একটি মোটরসাইকেলকে অজ্ঞাত একটি গাড়ি চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই সেটি দুমড়ে-মুচড়ে দুই আরোহী নিহত হয়।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানান, বালিপাড়া-নান্দাইল সড়কের বইন্নার ব্রিজের ওপরে অজ্ঞাত এক গাড়িচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। নিহত দুজনের পরিচয় ও চাপা দেওয়া গাড়িটি শনাক্ত করা যায়নি।
বগুড়ায় নিহত ২
জেলার দুটি দুর্ঘটনার মধ্যে একটি ঘটেছে নন্দীগ্রাম উপজেলায়। সেখানে ট্রাকচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন সাব্বির হোসেন নামে ৩৫ বছর বয়সী এক মোটরসাইকেলের চালক। আহত হয়েছেন তার সহকর্মী আব্দুল কুদ্দুস।
সকাল সাড়ে ৭টায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে শাজাহানপুর উপজেলার রুপিহার নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
সাব্বির হোসেন শাজাহানপুর উপজেলার পোয়ালগাছা গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নন্দীগ্রামে কোয়ালিটি ফিড নামের একটি কোম্পানির ওয়ার্কার ছিলেন। নিহতের মরদেহ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
অন্য দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শিবগঞ্জ উপজেলায়। দুপুর দেড়টার দিকে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে ট্রাকচাপায় আব্দুল বারী নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি অটোভ্যান চালক ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) আশিক ইকবাল। আব্দুল বারী মোকামতলা ইউনিয়নের ভাগকোলা পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ফয়েজ কাজীর ছেলে। দুর্ঘটনায় ঘাতক ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ২০-১৮৮৫) জব্দ ও চালক আব্দুস সালাম (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁচছিড়া গ্রামের মৃত সাবেদ আলীর ছেলে।
রংপুর: রংপুর নগরীতে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক নারী নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করা হলেও পালিয়েছে চালক।
বিকেল ৪টার দিকে নগরীর আরকে রোডে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মেঘনা ক্লিনিকের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মমতাজ বেগমের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। তার স্বামী ওমর আলী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ রহমান।
পুলিশ জানায়, মমতাজ সদ্য জন্ম নেওয়া নাতিকে হাসপাতালে দেখে মোটরসাইকেল করে বাড়ি ফিরছিলেন। আরকে রোডে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মেঘনা ক্লিনিকের সামনে ইউটার্ন নেওয়ার সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে গাড়ির পেছনে বসা মমতাজ বেগম ছিটকে পড়ে যায়। দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মোটরসাইকেল চালক রোকনুজ্জামান সিয়াম।
কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ রহমান বলেন, এ ঘটনায় দুর্ঘটনাকবলিত অ্যাম্বুলেন্সটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। চালক পলাতক হলেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুন্না শেখ নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। রোববার (১৯ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের হঠাৎপাড়ার দর্শনা ওয়েব ট্রেনিং সেন্টারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মুন্না শেখ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের লাল্টু শেখের ছেলে। ব্যবসার সুবাদে তিনি দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার মোবারকপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে মুন্না শেখ প্রাইভেটকার চালিয়ে চুয়াডাঙ্গায় যাচ্ছিলেন। আনোয়ারপুর হঠাৎপাড়ার দর্শনা ওয়েব ট্রেনিং সেন্টারের সামনে পৌঁছার পর হঠাৎ সামনে একটি কুকুর চলে আসে। এতে হঠাৎ ব্রেক করলে প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছে ধাক্কা লাগে। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় মুন্না শেখকে উদ্ধার করে প্রথমে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে দুপুর দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। প্রাইভেটকারের ধাক্কায় কুকুরটিও মারা গেছে।
মাগুরা: মাগুরায় বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী এক নারী পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তার স্বামী ও চার বছরের মেয়ে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার কছুন্দি বাজার এলাকায় মাগুরা-ফরিদপুর মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পুলিশ সদস্যের নাম লাবনী ভদ্র। তিনি মাগুরার শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী ও ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার অনিল ভদ্রের মেয়ে। নিহত লাবনী ভদ্র ও তার স্বামী দুজনই রাজবাড়ী রেল পুলিশে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনায় লাবনীর স্বামী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস ও তাদের চার বছরের মেয়ে অংকিতা বিশ্বাস আহত হয়েছেন। তাদেরকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পিরোজপুর: পিরোজপুর-নাজিরপুর-ঢাকা সড়কের কদমতলা এলাকায় মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কায় এক নারী মারা গেছেন। আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলে থাকা নিহত নারীর ৩ বছরের সন্তান ও স্বামী। তাদের অবস্থাও গুরুতর।
সকাল ১০টার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের পিরোজপুর-নাজিরপুর-ঢাকা সড়কে এ ঘটনা।
নিহত নাজমিন বেগম নাজিরপুর উপজেলার বুইচাকাঠী গ্রামের আলমগীর মোল্লার স্ত্রী এবং পিরোজপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ব্রাহ্মণকাঠী এলাকার ইলিয়াস দুরানীর মেয়ে।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. জা. মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
ঢাকা: এছাড়া শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর শ্যামপুরের পোস্তগোলা এলাকায় দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় কুরবান আলী নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। লেদ মেশিনের ব্যবসা ছিল তার।
নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাসায় ফেরার সময় শ্যামপুরের পোস্তগোলা মাদরাসার সামনে দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় আহত হন তিনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
এছাড়া রাত দেড়টার দিকে ট্রাকের ধাক্কায় আহত মো. শাহাবুদ্দিন ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। যিনি শনিবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর কদমতলী ধলেশ্বর ঘাট এলাকায় দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন।
নিহত শাহাবুদ্দিন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সরদারপাড়া গ্রামের মো. মোখলেসুর রহমানের ছেলে। রাজধানীর জুরাইনের বউবাজার এলাকায় থেকে একটি কোম্পানির মালামাল ভ্যানে করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন তিনি।
দ্যা মেইল বিডি/এইচএসএস