আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ-
রংপুরের তারাগঞ্জ হাটে অসুস্থ গরু ও ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। জবাইয়ের আগে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ সুযোগে কিছু কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে অসুস্থ গরু-ছাগল কম দামে কিনে এর মাংস বিক্রি করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রোগ নির্ণয়ে কোনো ধরনের তদারকি না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা ভেজালমুক্ত মাংস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, শুক্রবার ও সোমবার এই দুইদিনের হাটবারে ৩৫-৪০ টি গরু জাবাই করা হয় তারাগঞ্জ হাটে। এছাড়া অন্যান্য দিনগুলোতে ১৫ থেকে ২০ টি গরু জবাই হয়। সুস্থ অসুস্থ দেখার সময় নেই মাংস ব্যবসায়ীদের । একের পর এক গরু জবাই করেই চলছে। জবাই করার নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও সেখানে না করে মুল হাটেই চলছে জবাই কার্য । ময়লা ও দুর্গন্ধে রুমাল ছাড়া চলা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে মাংস হাটিতে । একাধিক দিন সকাল থেকে দিনভর অপেক্ষা করেও দেখা মেলেনি কোন পরীক্ষকের ।
অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রির সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে অভিযুক্ত এক মাংস ব্যবসায়ী প্রতিবেদকে জানায়, গরুটি তো মরে যায়নি। এই কিছুটা অসুস্থ ছিল আরকি । তবে মাংসটা অনেক ভালো ছিল। অর্ধেক ফ্রিজে রেখেছি আর অর্ধেক বিক্রি করেছি ।
তারাগঞ্জ হাটে বাজার করতে আসা সোবহান মিয়া জানান, এখন বেশির ভাগ কসাই অসুস্থ গরু-ছাগলের খবর পেলে গ্রামাগঞ্জে ছুটে গিয়ে অল্প দামে কিনে আনে। প্রতি কেজি মাংস ক্রয় মূল্য পরে ২০০-২৫০ টাকা। বিক্রি করেন তার তিনগুন দামে (৬৫০-৭০০ টাকা দরে)। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই। যাদের দেখার কথা তারা পশু হাসপাতালে বসে মাসোহারা পেয়েই মুখে কুলুপ এঁটেছেন ।
তারাগঞ্জ হাটের চাল ব্যবসায়ী লাবু মিয়া বলেন, আমরা কোনদিন পশু হাসপাতালের দায়িত্বরত কোন পরীক্ষককে জবাইয়ের পূর্বে গরু-ছাগলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দেখিনি।
মাসোহারার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাংস ব্যবসায়ী জানান, গরু প্রতি ৩০০ টাকা করে দিলেই হয় । হাটে হাটে ১০-১২ হাজার টাকা কালেকশন করে দেই। টাকা না দিয়ে পরীক্ষা-টরিক্ষার ঝামেলায় কে পরতে চায় বলেন।
থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তোহাকুল ইসলাম জানান, অসুস্থ গারু জবাই করে বিক্রির বিষয়টি প্রায়ই আমরা শুনতে পাই। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ না করায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়না। আবার ঘটনাস্থলে গেলে কসাইরা কৌশল অবলম্বন করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া দেখে বোঝার উপায় থাকে না।
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মুমিনুল ইসলাম পায়েল বলেন, গরু জবাই করার আগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসকেরা।
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীল রতন দেব বলেন, অসুস্থ গরুর মাংস খেলে মানুষ অ্যানথ্রাক্সসহ অন্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ. কে. এম ফরহাদ নোমান বলেন, আমাদের জনবল সংকট । অসুস্থ গরু-ছাগল জাবাই করার কথা জানা নাই তবে কেউ যদি করে তবে তা করা দণ্ডনীয় আপরাধ ।