নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় এক মাদরাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিনজন শিক্ষার্থীকে বেদম মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার (১২ই মার্চ) দক্ষিণ খড়িবাড়ী মুন্সিপাড়া দাখিল মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই মাদরাসার তিনজন শিক্ষার্থী তিস্তা মহাপরিকল্পানা নিয়ে ক্লাশ চলাকালীন অবস্থায় আলোচনা করলে তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে সহ-সুপারিনটেনডেন্ট মোখলেছুর রহমান বেদম মারপিট করেন। এতে দুইজন ছাত্রী গুরুতর আহত হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জানাজানি হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওই প্রতিষ্ঠানে সুপারিনটেনডেন্ট মোহম্মাদ আলী কে অবগত করে। কিন্তু সুপারিনটেনডেন্ট এই ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে গণ্যমাধ্যম কর্মীদের কাছে ছুটে আসে ভুক্তভোগী পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে, মঙ্গলবার ( ১৪ই মার্চ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সহপাঠীদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যায়। রহিমা (ছন্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থীর ডান হাতের বাহুতে বেত্রাঘাতে দুই ইঞ্চি পরিমাণ জায়গায় রক্ত জমাটবেধে কালো হয়ে যায়। ওই শিক্ষার্থী ভয়ে প্রথমে তার পরিবারকে না জানিয়ে তার মায়ের কাছ থেকে মাথা ব্যাথা ও জ্বরের কথা বলে ওষুধ নিয়ে খায়। পরে তার মা জানতে পরে তাকে স্থানীয় বাজারে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। স্থানীয়রা জানান, ইতিপূর্বে ওই শিক্ষক মাদ্রাসা পার্শ্ববর্তী গ্রামের মোক্তার হোসেনের মেয়ে রুবি আক্তারকে মারপিট করে অজ্ঞান করে ফেলার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ঘটনার সত্যতা জানতে ওই মাদরাসায় সংবাদকর্মীরা গেলে তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে রুঢ় আচরণ করে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ। তারা এও বলেন, আপনারা যা খুশি লিখতে পারেন, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।
কারিমা’র (ছন্মনাম) মা শরীফা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে সহ-সুপার মোখলেছুর রহমান যে মাইর গুলো মেরেছে ওনার মেয়ে হলে কি ওনি ওভাবে মারতে পারতেন? বাচ্চাদের আবার ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন বাসায় যেন কেউ না জানে। আমার ভাতিজির কাছ থেকে শুনতে পাই যে আমার মেয়েকে নির্দোয় ভাবে মেরেছে স্যার। রাতে দেখি প্রচন্ড জ্বরে কাতরাচ্ছে মেয়েটি। আমি সুপার স্যার কে বলেছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
আরেক ছাত্রী রহিমা (ছন্মনাম) নাসিমা বেগম বলেন, আমার মেয়ে বাসা আসার পরে দেখতেছি চোখ লালচে হয়েছে। আমার কাছ থেকে ওষুধ নিয়েছে খেয়ে। মেয়ে ভাত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সারারাতে ঘুমাতেও পারেনি। সকালে দেখি জ্বর এসেছে। বললাম জ্বর কেন এসেছে তখন বললো স্যার আমাকে মেরেছে। আমি ওর বাবাকে সুপার স্যারকে বলার জন্য পাঠিয়ে দেই। পরে দেখি ডান হাতের বাহুতে বেত্রাঘাতে দুই ইঞ্চি পরিমাণ জায়গায় রক্ত জমাটবেধে কালো হয়ে গেছে। আমার মেয়েকে অন্যায় ভাবে শিক্ষক যে মারপিট করলো আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মোখলেছুর রহমানে কাছে জানতে চাইলে, তিনি প্রথম দিকে বিষয়টি মিথ্যা, বানোয়ার, ভিত্তিহীন ও উদ্দ্যোশ প্রনীত বলে উল্লেখ করলেও পরে তিনি শাসনের কথা স্বীকার করেন।
মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মোহম্মাদ আলী বলেন, মাদরাসায় এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি আর আমাকে কেউ কোনো কিছু জানায়নি।
ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক এধরনে ঘটনা কাম্য নয়। খোজখবর নিয়ে এবিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।