স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ যশোরের প্রথম শহীদ যশোরের গৃহবধূ চারুবালা কর।আগামীকাল মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোরের প্রথম শহীদ চারুবালা কর-এর ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী।
শহীদ চারুবালার মৃত্যু দিবস   উপলক্ষে  একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোর জেলা শাখা, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও নীলগঞ্জ মহাশশ্মান কর্তৃপক্ষের আগামীকাল সকাল ১০টায় নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে তার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবে।
আর তাই  মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সকলকে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোর জেলা শাখার সভাপতি হারুণ অর রশিদ।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে সারা দেশের মত স্বাধীনতার স্বাদ নিতে উত্তাল ছিল যশোরের জনতা। ২ রা মার্চ ঢাকায় প্রথম স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর ৩রা মার্চ সকালেই মুক্তিকামী জনতা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মিছিল বের করে যশোর শহরে।
হাজারো মানুষের এই মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি রেলরোডে পৌঁছালে খাদ্য গুদামের সামনে পাক বাহিনীর অবস্থান দেখে বিক্ষুব্ধ জনতা সার্কিট হাউজ অভিমুখে রওনা হয়। সার্কিট হাউজেও পাক আর্মিদের দেখে সেখানে আক্রমনের প্রস্তুতি নেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। তখন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ মশিউর রহমান সবাইকে শান্ত করে ঈদগাহ ময়দানে অবস্থান নেন। মধ্য দুপুরের দিকে খবর আসে পাক বাহিনী টেলিফোন ভবন দখল নিতে যাচ্ছে। তখন সাথে সাথে সংগ্রামী জনতা তা প্রতিহত করতে অগ্রসর হয়। বিক্ষোভকারী দল টেলিফোন ভবনের সামনে পৌঁছালে ভবনের ছাদ থেকে পাক বাহিনী আতর্কিতভাবে গুলি চালায়। গুলিতে টেলিফোন ভবনের পাশেই স্বামীর সাথে বসবাস করা নিঃসন্তান চারুবালা কর নিহত হন।
নিহত চারুবালার লাশ নিয়ে রাখা হয় যশোর সদর হাসপাতাল মর্গে এবং লাশ হস্তান্তরে বাঁধ সাধে পাক আর্মি। তখন মশিউর রহমান পাক আর্মিদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে বলেন, আমার মায়ের লাশ আমি নিয়ে যাব। জনতার বিক্ষোভের মুখে পাক বাহিনী  লাশ হস্তান্তর করতেবাধ্য হয়।কমপক্ষে  ২৫ হাজার মুক্তিকামী মানুষ চারুবালার মৃতদেহ নিয়ে নীলগঞ্জ শ্মশানে শেষকৃত্য করেন।
 দূর্ভাগ্যজনক সত্য যে,যশোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রথম শহীদ চারুবালা কর আজও অজানা এক ইতিহাস। পালন করা হয়না তার মৃত্যু দিবস। তবে চারুবালার মৃত্যু ছিল যশোরের স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে এক অনুপ্রেরণা।
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version