নিলামের ডাকে গিলছে কুড়িখাই জামাইমাছের মেলা
মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক,কটিয়াদী(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
নিলামের ডাকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে চলে আসা কুড়িখাই মেলার ক্রেতা বিক্রেতা দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে। মেলায় বিক্রেতার সংখ্যা বেশি হলেও বিক্রি হচ্ছে কম। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ আসতেই চাচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরাও চিন্তিত বলে তারা জানায়। ক্রেতারা বলছেন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি এত যা কল্পনাই করা যায়না। ১৩লক্ষ ১০ হাজার নিলাম ডাকের সম্পূর্ন প্রভাব পড়ছে সাধার ক্রেতার উপর। গত ১৩ ফেব্রæয়ারী সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মেলাটি। ৭ দিন ব্যাপী মেলার মূল আকর্ষণ হচ্ছে মাছের বাজার সেখানেও একি চিত্র। আগের মতো বিক্রি হচ্ছেনা মাছ। বড় মাছ তুললেও বিক্রি করতে না পেরে অন্য স্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে প্রতিদিন চুরি হচ্ছে মোবাইল,স্বর্নের চেইনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। যা নিরাপত্তাহীনতা ভোগছে সাধারন মানুষ।
সরেজমিনে দুপুরে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো সেই চিরচেনা ভীড় নেই। দোকানপাটের সংখ্যা দেখা যায় বেশি। তবে আগের মতো গাদাগাদি ভীড় নেই। কেনা-বেচা জমে উঠতে দেখা যায় নি।এসময় অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা হয়।তাদের কথায় উভয়ের কন্ঠেই বুঝা গেল ক্ষোভ আর হতাশার স্বর কেউ প্রতিদিন ভাড়া দিচ্ছে আর কেউ ১ হাত জায়গা ১ হাজার ১৫০০ টাকা ভাড়া দিচ্চে। আবার এ্খানকার স্থানীয় জায়গার মালিকরা সঠিক ভাড়া পাচ্ছে না। এগুলো কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে।
ধুলদিয়ার মাছ ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান,বড় কয়েকটি কাতল মাছ এনেছিলাম কিন্তু ক্রেতা পাচ্ছি না। রোজ ৬ শ থেকে আটশো করে মেলার চাঁদা দিতে হচ্ছে। লাইট বিল আছে। খাওয়া খরচ মিলিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই অনুযায়ী মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে।’
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা মাছ ক্রেতা শফিক খান বলেন,আকাশছোঁয়া দাম হাঁকাচ্ছে মাছের। এক ঘন্টা ঘুরেও মাছ মিলাতে পারছিনা। খালি হাতে ফিরতে হবে। এ রকম অবস্থা থাকলে সামনে বছর আর আসা হবেনা। ক্রেতা শামিম উদ্দিন,সবুজ,কাশেম মিয়া বলেন,উৎসবের মেলা এখন বাণিজ্যিক রুপ নিয়েছে। বাজারের চেয়ে দাম বেশি জিনিসের। দোকানীরা দিচ্ছে যায়গা ভাড়ার দোহাই। ফলে দাম স্বাভাবিক থাকছেনা।
শিবপুরের নিয়মিত কসমেটিকস দোকানী জব্বার আলী বলেন,মেলা আর মেলা নাই। শুধু খরচ আর খরচ। এক হাত যায়গা ভাড়া দিতে হচ্ছে এক হাজার। এভাবে রোজ ৩-৪ হাজার টাকা চলে যাচ্ছে। বিক্রিও কম। বেশ কয়েকজন কসমেটিকস দোকানী বলেন, রোজ এক দুই হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। পজিশন অনুযায়ী অনেকের আরো কয়েক গুণ বাড়ে টাকার পরিমাণ। আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে কুলিয়ে উঠতে হিমসিম খেতে হবে।
স্থানীয় পিপুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন,যে অবস্থা দেখতে পাচ্ছি তা আগের চেয়ে ভীন্ন। আগের মতো জমজমাট নাই। ব্যবসায়ীদের সুবিধা না দিলে এবং চাঁদার পরিমাণ না কমানো হলে জিনিসপত্রের দাম কমবেনা। ফলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে মেলা থেকে।
কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই এলাকার এই মেলাটি কিশোরগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলা হিসেবে পরিচিত। কুড়িখাই এলাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) এর বংশধর হযরত শাহ সামছুদ্দীন (রহ.) এর সমাধি সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ সোমবার মেলা শুরু হয়। মেলাকে ঘিরে কয়েক কোটি টাকার কেনা-বেচা হয়ে থাকে। এবছর মেলার নিলাম ডাক উঠছে ১৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। ডাক পেয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা জিল্লুর শাহ।
জিল্লুর শাহ জানান, মেলায় আনুষঙ্গিক অনেক খরচ। মানুষের জমির যায়গা ভাড়া দিতে হয়। দূর থেকে যা মনে হয় আসলে তা নয়। কোন জোর নাই,খুশিমনে যা দেয় তাই নেওয়া হচ্ছে।’মেলা কমিটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেলা ঠিক ভাবেই চলছে। কেনা-বেচা ভালো হচ্ছে। অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়া হচ্ছেনা।’
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঈনুজ্জামান অপু বলেন, কমিটি নিয়ে একটি রিট দায়ের করা আছে।আমি এখনো মেলায় যাই নি। কি হচ্ছে বলতে পারছি না। যা সঠিক তাই তুলে ধরেন।’
মেলা কমিটির সভাপতি কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন,অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়ার অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সকল জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। হয়ত এখানেই পরিবর্তন হয়েছে। এমআরপির চেয়ে যেন বেশি নেওয়া না হয় সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে।
মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক
কটিয়াদী(কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
তারিখঃ ১৭-০২-২০২৩ইং
মোবাঃ ০১৮৩৭৯৭৬৬৯৬