শীতের সকালে প্রকৃতি যখন কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকে, তখন বাগানে উঁকি দেয় ডালিয়া, ষ্টার, গাঁদা, সাইলোছিয়া, ক্যাবেস, গ্যাজিলিয়া, সেলফিয়া, জুঁই, লাল রঙের দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের এসব বাহারি ফুল। দৃশ্যটি নীলফামারী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের।
নীলফামারী জেলা সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীলফামারী সরকারি কলেজ এর ফুলের বাগান শুধু কলেজ এর সৌন্দর্য বৃদ্ধিই নয় এই ফুল মানসিক প্রশান্তি জোগাচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
২০ প্রজাতির ১৪ হাজার ফুলের গাছে ছেঁয়ে আছে নীলফামারী সরকারি কলেজ এর সবুজ ক্যাম্পাস। এর মধ্যে রয়েছে বিশাল তিনটি ফুলের বাগান ও কলেজ অভ্যন্তরে রাস্তায় দুই পাশে অসংখ্য ফুলের গাছ।
এই ফুল দেখতে শিক্ষার্থী ছাড়াও বাহিরের শত মানুষ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভীর জমাচ্ছে কলেজ ক্যাম্পাসে। ফুল বাগানের পাশে বসে গল্প করছে, ছবি তুলছে, কখনো একা আবার কখনো গ্রুপ করে।
সহকারী অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞান নুরুল করিম বলেন আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসের ফুলের বাগান আমাদের সুন্দর মুহূর্তগুলোকে আরো সুন্দর করে তুলছে আমাদের ক্লান্তি দূর করে কাজে অনুপ্রেরণা জোগায় বাহারী রংগের এই ফুলের সৌরভ। আমরা অধ্যক্ষ মহোদয় এর প্রতি কৃতজ্ঞ এমন সুন্দর ফুলের বাগান করার জন্য।
কলেজ এর পশ্চিম ক্যাম্পাসে বাংলা বিভাগের সামনে রাস্তার দুইপাশে রয়েছে দুইটা বাগান, একটা গোলাপ বাগান আর বিভিন্ন ফুলের সমরোহে দৃষ্টি নন্দন অন্যটি। তৃতীয় বাগানটি হচ্ছে কলেজ জামে মসজিদ এর চারদিকে।
ডালিয়া, এসটার, ক্যালেন্ডুলা, গ্লাডিওলাস, পিটুনিয়া, আইস প্ল্যান্ট, ক্যান্ডি টার্ফ, কর্ন ফ্লোয়াল, চন্দ্রমল্লিকা, সূর্যমুখী প্রভৃতি ২০ প্রজাতির হাজার হাজার ফুলে পরিপূর্ণ এই ফুলের বাগান।
অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ দিদারুল ইসলাম এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: আনিছুর রহমান এর নির্দেশনায় তৈরি হয়েছে এই ফুলের বাগান। আর ফুলের বাগান সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হাসনাত বিন দেলোয়ার। তিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ করেছেন ক্যাম্পাস।
কলেজ এর নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হয়েছে ফুলের বাগান। বাহারী রংগের এই ফুল শিক্ষার্থীদের মনকে করে উজ্জীবিত তেমনি মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদেরকেও। শিক্ষার্থীরা জানান, একটানা ক্লাস আর পড়াশোনায় যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই তখন এই ফুলের বাগানে আসি, ফুল দেখি, ছবি তুলি এবং আমাদের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। কলেজ মাঠেই দেখা হয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আনিছুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফুল সবাই ভালোবাসেন। কিন্তু ফুলের বাগান করা কষ্টসাধ্য। কলেজ ক্যাম্পাসে বাগান করা আরো কষ্টকর। আমাদের অধ্যক্ষ স্যারের আগ্রহে এবং ঐকান্তিক পরিশ্রমে ফুলের বাগান করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও বাগান নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তারাও ফুলের বাগানটি রক্ষা করতে সহযোগিতা করছেন।
নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিদারুল ইসলাম বলেন,’আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সকলের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষার্থীরা আগে ক্লাসের ফাঁকে বাইরে যেতো। কিন্তু এখন তারা ক্যাম্পাসেই থাকে। ফুলগুলো তাদের আকৃষ্ট করে রাখে। প্রতিদিন সকাল-সকাল কলেজের বাগানের পরিচর্যা করা হয়। কলেজ ছুটি হলে বিকেলে ফুলের গাছগুলোর যত্ন নেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন,’যখন বাগান করা শুরু করি; তখন আশঙ্কায় ছিলাম! শত শত শিক্ষার্থীর মধ্যে বাগান টিকিয়ে রাখা কঠিন। ভেবেছিলাম, ফুল ফুটলে ছেলেমেয়েরা ছিঁড়বে। কিন্তু তা হয়নি। এখন যে শত শত ফুল ফুটে আছে, আমার কোনো শিক্ষার্থী একটি ফুলও ছেঁড়ে না। আমার খুব ভালো লাগে। আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’
শুধু শিক্ষার্থীই নয় শিক্ষকগণ এই ফুলের বাগানে এসে বসেন, ফুল দেখেন, ছবি তুলেন।
শহরের বিভিন্ন মানুষ তাদের শিশু সন্তান, প্রিয়জন নিয়ে এই বাগান পরিদর্শনে আসেন। তারা এই বাগান দেখে উচ্ছাস প্রকাশ করেন। ছবি তুলে সেই ছবি আপ্লোড করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সুন্দর ফুলের বাগানে তারা মুগ্ধ হয়ে ধন্যবাদ জানান কলেজ কর্তৃপক্ষকে।