পূর্বের তূলনায় এবার ভালো দাম পাওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছে ফুলগাজীর কৃষকরা৷
ফুলগাজীতে বোরো ধানের আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। দীর্ঘদিন ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এবার কৃষক আমনের দাম আগের তুলনায় ভালোই পেয়েছে। এ কারণে ফুলগাজীর কৃষকরা উৎসাহ উদ্দীপনায় বোরো আবাদ শুরু করেছে। ধান রোপণ করতে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা।
জানা যায়, জমিতে পানি সেচ, হালচাষ, সার প্রয়োগ, বীজ উঠানো, ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে তারা। গত মৌসুমের আমন ধানের ভালো ফলন প্রতি একরে প্রায় ৬০ মণ ও মূল্য প্রতিমণ ৯শ থেকে হাজার টাকা পেয়ে কৃষকদের বোরো আবাদে এবার আগ্রহ বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকালের শীত উপেক্ষা করে সন্ধ্যা অবধি বোরোর জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ বা জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন। কেউ জমির আইলে কোদাল রেখে কিংবা জৈব সার বিতরণ কাজে ব্যস্ত। কেউ সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ কিংবা পাম্পের বা শ্যালো মেশিনের জন্য ঘর তৈরি করছেন।আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে কেউ বা বীজতলা থেকে চারা তুলে তা রোপণ করছেন জমিতে।
ফুলগাজী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় ৪ হাজার ৭ শত হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের কৃষক জাবেদ বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষকদের। এবার আমন চাষ করে লাভবান হয়েছে কৃষক। সেই আশায় পুরোদমে আবার বোরো আবাদ শুরু করে দিয়েছে কৃষক।
কৃষক শাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি ধান বিক্রির জন্য ২০ শতক জায়গাতে হাইব্রিড সিনজিনটা লাগিয়েছেন। এছাড়াও পরিবারের ভোজন নিবারনের জন্য বোরো ধানও লাগিয়েছে। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যেভাবে সার ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে সে অনুপাতে ধানের দাম না থাকলে কৃষকরা ধান রোপন করে লাভবান হতে পারবেনা। পত্র পত্রপত্রিকায় যেভাবে রেদখছি এই মাস থেকে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে সেচের দামও বৃদ্ধি পাবে।
সূত্রে জানাযায়, অন্যান্য বছর কোল্ড ইনজুরিতে পচন লেগে বীজ চারা নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো চারাও বেশ ভালো হয়েছে।
ফুলগাজীর দেড়পাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হক জানান, বোরো ধান লাগাতে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়। এছাড়া বোরো আবাদে খরচও বেশি হয়। বোরো ধান লাগানোর পর থেকে তিন-চার দিন পরপর সেচ দিতে হয়। আশা রাখি বোরো আবাদ হলে বেশি লাভবান হবো।
ফুলগাজী উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা জানান, এই বছর বোরো আবাদে উপজেলায় মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪ হাজার ৭ শত হেক্টর জমি। তারমধ্যে হাইব্রিড ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭ শত ৫০ হেক্টর ভূমি আর উচ্চ ফলনশীল (উপশি) জাতের ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টর জমি।
প্রণোদনার বিষয়ে তিনি জানান, এই বছর হাইব্রিড ধানের বীজ ২ কেজি করে মোট ২৮০০ জন কৃষককে সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। একই সময়ে উচ্চ ফলনশীল (উপশি) জাতের ধানের বীজ ৫ কেজি, সার ২০ কেজি করে ১৩০০ জন কৃষককে সরকারি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। সর্বমোট উপজেলায় ৪১০০ জন কৃষককে সরকারি প্রণোদনায় বীজ, সার প্রদান করা হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে উপজেলায় পুরোদমে বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে। তথ্যমতে এই পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ৫০ শতাংশ ভূমিতে বোরো ধান আবাদ সম্পন্ন হয়ে গেছে। আবহাওয়া ও সঠিকভাবে সেচ প্রদান করতে পারলে খুব শিগগিরই বোরো ধান রোপণ শেষ হবে এবং আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জোবায়ের হোসেন রিহান
ফেনী জেলা প্রতিনিধি