তানভীর আহমেদঃ শীতকালে ঝরে পড়া পাতার ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে গাছে গাছে আবার নতুন পাতা গজায়, পাতার ফাঁকে বসে কুহু-কুহু গান ধরে কালো কোকিল এবং ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছগাছালি। মনের আনন্দে পাখিরা গান গাইতে শুরু করে এই বসন্তে। চারিদিকে শুধু ফুলের মৌ মৌ সুগন্ধ। আর তাই ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির পাশাপাশি রঙ্গিন সাজে বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠে তরুণ-তরুণীরা।
ঋতুর রাজা বসন্তের আগমনে মৃদুমন্দ বাতাসে প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে সজ্জিত শিমুল বাগানে যেন পূর্ণতা পেয়েছে। কবির ভাষায় বলা যায়-এতো ফুল ফোটে/এতো বাঁশি বাজে/এতো পাখি গায়। বাগানের প্রতিটি গাছে শত ভাগ গাছের ফুল ফুটেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় লাল ফুলের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে কেউ। প্রকৃতির সাথে বাগানের পাশেই মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, বারেকটিলা ও যাদুকাটা নদীর তীরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। এখানে আসলে মন ভরে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে। এ যেন এক অনবদ্য কাব্যিক ভাবনায় প্রান্তর।
দেশের সর্ববৃহত্তম জয়নাল আবেদিন শিমুল বাগানটি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রাম ও যাদুকাটা নদী সংলগ্ন এর অবস্থান। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে আরও আধুনিকায়ন করলে দুর দূরান্ত থেকে আগত মানুষের মাঝে আকর্ষণ বাড়বে বলে জানান উপজেলার সচেতন মহল।
জানা যায়, ২০০২ সনে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে বালু আবরিত ৯৮বিঘা অনাবাদী জমি ক্রয় করে তিনি এ বাগানে সারিবদ্ধ ভাবে ৩হাজারের অধিক শিমুল চারা রোপণ করেন। ফাগুনের শুরুতে প্রতি বছরের মতই শীতের শেষে বাগানে সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো ৩হাজারের অধিক শিমুল গাছে সবুজের আবৃত বেধ করে প্রতিটি গাছের ডালে ডালে প্রতিটি কলি ফুটছে। ফুলের গন্ধে মাতুয়ারা হয়ে আশপাশের বাসিন্দা, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ঢল নামতে শুরু করেছে। প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটির দিনসহ বিশেষ দিনগুলোতে বেড়াতে, শিমুল ফুল, প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে লাল ফুলের গালিচা বিছিয়ে প্রতি বছরের মত এবারও আহবান করছে প্রকৃতি প্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুদের। বাগানে পর্যটকদের অর্থের বিনিময়ে কিছুটা আনন্দ দেয়ার জন্য শিশু, কিশোর, যুবকদের তৈরি ফুল দিয়ে তৈরি মালা, লাভ চিহ্ন ও দোলনা, সুসজ্জিত ঘোড়া আছে ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার তারা অনেকেই এখানে জীবিকা নির্বাহ করছে। বাগানটিকে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন দোকানীদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আগত দর্শনার্থী ইকরাম মিয়া জানান, ফাল্গুন মাস জুড়েই শিমুল ফুল লাল পাপড়ি মেলে সৌন্দর্য বিলানোর কারণে প্রকৃতি প্রেমী, পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুদের আগমনে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
আগত দর্শনার্থী হাসনাত তালুকদার বলেন, শিমুল বাগানে ফুল ফুটেছে। প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে সজ্জিত শিমুল বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি ভাল লাগছে। নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে আমরা একটু সবুজ, ফুলের সৌরভ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই আর এখানে তা মিটেছি।
বাগানে আসা দর্শনার্থী সুমাইয়া বলেন, নদী, পাহাড় আর শিমুল বাগান প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলন মেলা এখানে। এই বাগানটি দেখতে অসাধারণ, এত বড় শিমুল বাগান দেশের কোথাও আর দেখেনি। যার ফলে বাগানের ভিতরটায় গেলে এক অন্য রকম ভাল লাগার জন্ম নেয়। হারিয়ে যায় অন্য এক অজানা ভুবনে।
এদিকে, আগতদের সুবিধার্থে বাগানের মালিকপক্ষ বাগানের ভিতরে একটি ছোট খাবার হোটেল, বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্যানিটেশন, চেয়ার ও টেবিল বসিয়ে বসার ব্যবস্থা করেছে। এতে করে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা উপকৃত হবে বলে জানান, শিমুল বাগানের প্রতিষ্ঠাতা জয়নাল আবেদিনের ছেলে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান রাকাব উদ্দিন। তিনি আরও জানান, বসন্তের শুরুতেই গাছে সীমিত আকারে শিমুল ফুল ফুটেছে। এখন পুরো বাগানে ফুল ফোটেছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, জেলার আলোচিত পর্যটন স্পট হিসাবে পাহাড় ঘেরা তাহিরপুর উপজেলার এই শিমুল বাগানটি দিন দিন সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এ বাগানটি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটন ও সৌন্দর্য পিয়াসু লোকজন আসছেন।
কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সরাসরি বিভিন্ন ধরেনের বাসে সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু থেকে সিএনজি বা মটর সাইকেল জন প্রতি একশত টাকা লাউড়েরগড় বাজার। বাজার পার হয়ে যাদুকাটা নদী আর নদী পার হলেই শিমুল বাগান। আবার সুনামগঞ্জ আব্দুল জহুর সেতু পাড় হলে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি নিয়ে তাহিরপুর উপজেলা এরপর বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজার হয়ে শিমুল বাগান।