সোমবার থেকে ৮০০ বছরের পুরনো কুড়িখাই মেলা শুরু!জিনিসপত্রের মূল্য লাগামহীন
মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক ,কটিয়াদী(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই এর সপ্তাহব্যাপী মেলা সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। মেলাকে ঘিরে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। তবে কয়েক বছর ধরে মেলার জিনিসপত্রের দাম চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। এ বছর মেলা ডাক অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা সকল পণ্য তিনগুন বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আর সাধারন ক্রেতারা অসহায় হয়ে পড়ছে এবং ক্ষোভো ফুলে ওঠছে। ফলে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সাধারন ক্রেতা বিক্রেতা হারিয়ে ৮০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা জৌলস হারানো আশঙ্কা বলেই মনে করেন আগতরা । যদিও মেলা কমিটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন মূল্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে। এদিকে কটিয়াদীর শতবর্ষী কুড়িখাই মেলা জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি সকল মানুষের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,এবছর মেলার নিলাম ডাক উঠছে ১৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। ডাক পেয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা জিল্লুর শাহ। কারন মেলায় যায়গা পেতে তাদের টাকা দিতে হয়,স্থান ভেদে ডিমান্ড বেশি হয়। ফলে এর প্রভাব পড়ছে জিনিসের উপর। জিনিসপত্রের দাম তিনগুন বৃদ্ধিতে সাধারন ক্রেতারা ক্ষোভে মেলায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
সাধারন ক্রেতারা জানান,এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রথম ও শেষ মেলা।আর এ মেলাকে কেন্দ্র সবারই আশা আকাঙ্কা থাকে কিন্তু এবার জিনিসপত্রের যে দাম আমরা রাগে ফেটে যাচ্চি।কারন যেটা কিনতাম ১০০ টাকা এবার কিনতে হচ্চে ৩০০ টাকায়। জিনিসপত্র মূল্যবৃদ্ধি থাকায় রোজগার অনুযায়ী মেলায় পরিবার পরিজনদের নিয়ে মেলা করা সম্ভব হচ্চে না।
বিক্রেতারা জানান,আমাদের হাত হিসেবে জায়গা ভাড়া দিতে হয়।প্রতি হাত জায়গা ১হাজার ২হাজার টাকা। সে হিসেবে আমাদের ছোট দোকানগুলো সর্বনিম্ন ১০ হাত জায়গা এবং বড় দোকান ১৫-২০ হাত। সব মিলিয়ে ভাড়া পড়ে যায় বেশি।এভাড়া উঠাতে সবকিছু চড়া মূল্যে বিক্রি করতে হচ্চে।
কথিত রয়েছে,৩শত ৬০ জন আউয়ালিয়ার শিরোমনি শাহ জালাল (রহঃ) এর সফর সঙ্গী হযরত শাহ শামছুদ্দিন বুখারী(রহঃ) বাংলা ১২২৫ সালে ৩ জন সঙ্গী শাহ নাসির,শাহ কবীর ও শাহ কলন্দরকে নিয়ে কটিয়াদী উপজেলার কুড়িখাই অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন এবং তিনিই এ অঞ্চলের প্রথম ইসলাম ধর্মের প্রচারক। এছাড়া তিনি ছিলেন বার আউলিয়ার একজন। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ মঙ্গলবার কুড়িখাই শাহ শামছুদ্দিন বুখারী (রহঃ) মাজারে সপ্তাহব্যাপী মেলা শুরু হয়। মেলা শুরুর আগের দিন সোমবার দিবাগত রাতে মূলত যিকির আজগর ও মিলাদের মাধ্যমে শামছুদ্দিন বুখারী (রহঃ) ওরস হয়। এ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফকির,দরবেশ ও আশেকান ভক্তগণ এসেছে। এক কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী বসে মেলা। এতে কাঠের জিনিসপত্র ,মিষ্টি,খেলনা,মিঠাই,মন্ডা,মুড়ি ও বিন্নি খৈ এর বিরাট হাট বসে। এছাড়াও সাকার্স, পুতুল নাচ,নাগরদোলাসহ আয়োজন করা হয় বিভিন্ন বিনোদনের। মেলা উপলক্ষ্যে এ অঞ্চলের জামাইদের বিশেষভাবে দাওয়াত দেয়া হয় এবং মেলার প্রধান আকর্ষন মাছের হাট। প্রতি বাংলা বছরের মাঘ মাসের শেষ সোমবার এ ওরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার নেয়াজ পাকানোর জন্য ডেক বসিয়ে তবারুক বিতরনের মধ্যদিয়ে সপ্তাহব্যাপী ওরসের প্রস্তুতি চলে। সোমবার ওরস মোবারক ও মুড়ি খৈই মেলা,মঙ্গলবার মাছের মেলা,বুধবার বউ মেলা, বৃহস্পতিবার জামাই মেলা,শুক্রবার মিলন মেলা,শনিবার আনন্দ মেলা ও রবিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী কাঠের মেলা ও সাধারন মেলা থাকে। লোক বিশ্বাস মতে কুড়িখাই মেলায় বোয়াল মাছ খেলে সে বছরের জন্য শনির দশা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। মেলাকে উপলক্ষ্য করে প্রত্যেক বাড়ীতে জামাইদের দাওয়াতের প্রচলন রয়েছে।মেলার বিশেষ আকর্ষন শেষ ২ দিন বসে বউ মেলা। শুধুমাত্র এলাকার বিভিন্ন বয়সের মহিলারা মেলায় এসে কেনাকাটা করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় লক্ষাধিক লোকের আগমন ঘটে। এখানে মাজার শরীফ,মসজিদ পুকুর,প্রাথমিক বিদ্যালয়,স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিশ্রামাগার সহ পাগল ফকিরদের আবাসিক স্থান রয়েছে।
মেলা আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ মঈনুজ্জামান অপু জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসব। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এ মেলায় আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
পদাধিকার বলে এই মেলা কমিটির সভাপতি কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান বলেন,‘যুগ যুগ ধরে মেলাটি ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। মেলার পরিবেশ ঠিক রাখতে যা যা করণীয় সবকিছু করা হবে। জিনিসপত্রের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে যেন বেশি না হয় তা মনিটরিং করা হবে।
মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক
কটিয়াদী(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
তারিখঃ ১৩-০২-২০২৩ ইং