কিছু দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়ে-বেড়াচ্ছে বিশাল এক সাদা বেলুন। এ নিয়ে কিছুটা ভয়েই আছে দেশটি। তবে ভয়ে চীনের এই ‘গোয়েন্দা বেলুন’ ভূ-পাতিত করছে না পেন্টাগন। বলছে, নিরাপত্তার স্বার্থে এটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। দিন-রাত ট্র্যাক করা হচ্ছে গতিবিধি। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানাতে উড়তে দেখা গেছে বেলুনটিকে। এর কয়েক দিন আগেই কানাডার আকাশও অতিক্রম করেছে বেলুনটি। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, বেলুনটি বেশ উচ্চতায় অবস্থান করছে।
মার্কিন আকাশে প্রবেশের পর থেকেই কড়া নজরদারিতে আছে। সম্প্রতি মন্টানার ওপর দিয়ে এটিকে ট্র্যাক করা হয়। অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাইলোভিত্তিক কিছু পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে। সতর্কতার জন্য বুধবার বিলিংস লোগান বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছিল। পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানায়, বেলুনটির উচ্চতা বর্তমানে বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের উচ্চতার ঊর্ধ্বে। মাটিতে থাকা লোকদের জন্য সামরিক বা শারীরিক ক্ষতি করবে না। বৃহস্পতিবার বিকালে কংগ্রেস নেতাদের এ বিষয়ে অবহিত করা হয়। হাউজ স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি টুইটারে লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে চীন নির্লজ্জভাবে অবজ্ঞা করছে।
এই অস্থিতিশীল পদক্ষেপের অবশ্যই দ্রুত সমাধান করতে হবে।’ একজন সিনিয়র মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক চ্যানেলের মাধ্যমে চীনা কর্মকর্তাদের সাথে সংযুক্ত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এটিকে গুলি করে ভূ-পাতিত করার নির্দেশ দিলেও বেলুনের ধ্বংসাবশেষ ক্ষতি করতে পারে বলে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়। গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের বেলুনের কার্যকলাপ আগেও দেখা গেছে। বাইডেন সরকার সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষার জন্য কাজ করছে। এর আগে বেলুনটি আলাস্কার অ্যালেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করে। তার পর কানাডার আকাশেও এটি দেখা গেছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির জাতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগ।
তারা জানায়, এতে জনসাধারণের বিপদ হবে না। বিদেশি গোয়েন্দা হুমকি থেকে কানাডার গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য রক্ষা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, আগামী বছরগুলোতে এই বেলুনগুলোর ব্যবহার বাড়তে পারে। কেননা এটি স্পাই স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক সস্তা, রাডার দিয়ে চিহ্নিত করা এবং গুলি করা কঠিন। কখনো কখনো ‘পাংচার’ হওয়ার পরেও কয়েক দিন ধরে স্থির থাকতে পারে। কম্পিউটারের সাহায্যে বায়ুর গতিবিধি নির্ণয় করতে পারে। এদের কাজ কেবল নজরদারিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বোমাও বহন করতে পারে এই বিশেষ বেলুন। চীনের এমন পদক্ষেপের নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একেবারেই উসকানি নেই তা নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে ঘাঁটি গাড়তে গত কয়েক দিন ধরেই ফিলিপাইনের সঙ্গে দরকষাকষি চলছিল।
বৃহস্পতিবার দুই দেশই একটি নতুন সামরিক চুক্তিতে সই করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিলিপাইন একটি নতুন সামরিক চুক্তিতে সই করেছে। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো, ফিলিপাইনের চারটি সামরিক ঘাঁটি থেকে দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ানের আশপাশে চীনা তৎপরতার ওপর নজরদারি করবে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি ও স্বাধীনতা রক্ষা করবে বলে তারা আশা করছে। চীনকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলতেই এই কৌশল নিয়েছে ওয়াশিংটন। উত্তরে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান থেকে দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত মার্কিন-নেতৃত্বাধীন জোট যে চীন-বিরোধী বলয় সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাতে একমাত্র ফাঁক ছিল ফিলিপাইন। নতুন চুক্তিতে সেটিও পূর্ণ হলো। এখন এই চুক্তির মাধ্যমে ফিলিপাইনের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে মার্কিন সৈন্যদের আরও বেশি করে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে এবং গত তিন দশকের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো বিপুলসংখ্যক মার্কিন সৈন্য তাদের ফ্ল্যাশ-পয়েন্ট উপনিবেশ ফিলিপাইনে ফিরে আসবে।