সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাক্কলন শেষ করে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে শেষ করার কথা। কিন্তু নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করছেন না সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে নিয়োজিতরা। তবে বেশ কিছুদিন পূর্বে শনির হাওরে লোক দেখানো বাঁধের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে ১১ জানুয়ারি মহালিয়া হাওরের ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) সহ (আংশিক) ৩০টি কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপজেলা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি। এসব কমিটি গঠনের ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হয়নি ১টি প্রকল্পেও। যথাসময়ে বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে মারাত্বক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি হাওর ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকসহ হাওর বাঁচাও আন্দোলন নেতারা।
জানা যায়, গেল বছর পিআইসিদের গাফিলতির কারনে মহালিয়া হাওরের ময়নাখালী বিল সংলগ্ন বাঁধটি ও পার্শ্ববর্তী জামালগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন হিজলা গ্রামের পূর্বদিকের ফসল রক্ষা বাঁধটি চরম ঝুঁকিতে পড়েছিল। তখন স্থানীয় কৃষকের দিনরাত পরিশ্রমে মহালিয়া হাওরের এই চরম ঝুঁকিপূর্ণ দুইটি বাঁধ রক্ষা পেয়েছিল। এ সময় পিআইসির অন্তরালের লোকেরা কেউ বাঁধে ছিল না। বরং ভাড়াটে পিআইসিদের কাঁধে ভর করে ওই মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের পকেট ভারি করছে। এমনকি পিআইসির গাফিলতিতে টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ ভেঙে গেল বছর ১২০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। এসময় যেন কৃষকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। সেবার ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধের কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন স্থানীয় কৃষকরা।
অভিযোগ আছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও হাওরের প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী অকৃষকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বাঁধের কাজ। ফলে কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। শুধু মহালিয়া হাওর নয় উপজেলার শনি ও মাতিয়ান হাওরেও বেশ কয়েকটি পিআইসি কমিটি তুলে দেওয়া হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী অকৃষকের হাতে। এমনকি কৃষক নন এমন একই পরিবারের ২-৩ ভাই পিআইসির সভাপতি বনেছেন। মাতিয়ান হাওরে আপন দুই ভাইকে দেওয়া হয়েছে ২টি পিআইসি কমিটি। তারা হলেন মাটিয়ান হাওরের ২৩ নং পিআইসির সভাপতি কামরুপ জাহান ও তার ছোট ভাই ৩৯ নং পিআইসির সভাপতি আলী জাহান। একই পরিবারের দুই ভাইকে পিআইসির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ায় ফুঁসে উঠছে ঐ হাওরের কৃষকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত দুই ধাপে ১১২ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে।
মহালিয়া হাওর পাড়ের কৃষক আসিক মিয়া জানান, হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরুহয় নি আর হবেই বা কি করে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তো পিআইসিদের তাগিদ দেন না। পিআইসি গঠনে নিয়মনীতি তো মানছেন নাই আবার এখনোও বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেন না। কাজ শুরু না হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কারণ সময় মতো বাঁধের কাজ শুরু না হলে বাঁধ দুর্বল হয়। আর সামান্য পানির চাপে বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটে।
উপজেলা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা শওকত উজ্জামান জানিয়েছেন, পিআইসি কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। হাওরের পানি বিলম্বে নামার কারণে জরিপ কাজ যথাসময়ে শুরু করেও শেষ করা যায়নি। ফলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করতে অনেকটা সময় লাগতেছে।
এবিষয়ে উপজেলা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক ও বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, জেলায় বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধের কাজ শুরু করা হয়েছে। যে সব উপজেলায় এখনও শুরু করা হয়নি সেসব উপজেলায় বাঁধের কাজ দ্রুত শুরু হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা ছাড়াও নীতিমালা মেনে কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।