স্টাফ রিপোর্টার : গোলাম সারোয়ার জাহান মামুন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাষ্টার্স ডিগ্রী এবং একই বিষয়ে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ অর্জন করেন। কিন্তু তিনি শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলেন ব্যাংকিং বিষয়ে। তিনি ২০১৩ সাল থেকে এপর্যন্ত ওই কলেজে এইচএসসি (বিএম) শাখার ‘ব্যাংকিং’ বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে প্রায় ১০ বছর ধরে সরকারি অংশের বেতন ভাতাদি উত্তোলন করেন।
গোলাম সারোয়ার জাহান মামুন নেত্রকোনা সদর উপজেলার মনাং গ্রামের হেকীম তালুকদারের ছেলে। তিনি ২০০৬ সালের জুলাই মাস থেকে নেত্রকোনা আবু আব্বাছ ডিগ্রী কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পাশাপাশি তিনি (সারোয়ার জাহান) জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং সাবেক কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক পদে ছিলেন বলে জানা গেছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ লাভের পরে কীভাবে ও অদৃশ্য শক্তি বলে অন্য বিষয়ে শিক্ষক এমপিও ভুক্ত হলেন এনিয়ে কলেজের অধিকাংশ শিক্ষকের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে জল্পনা-কল্পনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কলেজের অধ্যক্ষ আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় অনেক জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকও তাকে সমীহ করে চলেন। তাদের জানা মতে. যে বিষয়ে অধ্যাপনা করেছে তার সে বিষয়ে শিক্ষক এমপিওভুক্তির বিধান রয়েছে। আবার বিএম (কারিগরী) শাখার এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়েও নিয়ম বহির্ভুতভাবে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্সের ক্লাস ও পরীক্ষা পরিচালনা করেন এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণও করেন। ‘ব্যাংকিং’ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থেকে অনার্স ও মাষ্টার্স শিক্ষার্থীও রয়েছে। এই অনিয়ম কীভাবে সম্ভব বলে মত প্রকাশ এবং সারোয়ার জাহানের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি সঠিক কিনা তা নিয়েও সন্দেহ পোষন করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগের পরে গোলাম সারোয়ার জাহান মামুনের শিক্ষক এমপিওভুক্তের জন্য ২০০৬ সালে জুলাই ও ২০০৭ সালে অক্টোবর মাসে দুফায় প্রস্তাবনা প্রেরণ করা করা হয়। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দুজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত থাকায় ও ৩০ ভাগ মহিলা কোটা পূরণ না হওয়ায় এমপিওভুক্তি হয়নি। পরবর্তীতে নেত্রকোনা-২ আসনের আওয়ামীলীগের সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান খসরু এর সুপারিশ নিয়ে কলেজের এইচএসসি (বিএম) কোর্সের ব্যাংকিং ট্রেডে শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে তৃতীয় দফায় সারোয়ার জাহানের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরিত হয়।
তৃতীয় দফার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে ৭ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (কলেজ-৩) সৈয়দ জাফর আলীর স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ, গোলাম সারোয়ার জাহানের ব্যাংকিং স্পেশালাইজেশনে শিক্ষক এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করা হয়। অথচ তিনি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বিএম শাখায় হিসাবরক্ষণ ও ব্যাংকিং বিষয়ে অ্যাফিলিয়েশন আছে, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অ্যাফিলিয়েশন নাই। তাছাড়া উক্ত (আবু আব্বাছ) কলেজের জেনারেল শাখায় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দুজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত আছে। আবেদনকারীর নিয়োগ ও যোগদানপত্রে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষক দেখানো হলেও এমপিওভুক্তির আবেদনে তাকে ব্যাংকিং স্পেশালাইজেনের শিক্ষক দেখানো হয়েছে। মাউশি অধিদপ্তরের মতামতে বিএম শাখায় ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষক এমপিও প্রাপ্য নন তিনি।
এ ব্যাপারে শিক্ষক গোলাম সারোয়ার জাহান মামুন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স ও মাষ্টার্স বিষয়ে সনদধারীর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “২০০৫ সালে প্রথম শিক্ষক নিবন্ধনে ‘ব্যাংকিং’ ও ‘হিসাবরক্ষণ’ বিষয় ছিল না। আমি ‘ব্যবস্থাপনায়’ ও আমার আরেক বন্ধু ফজলু সে ‘হিসাববিজ্ঞান’ বিষয়ে নিবন্ধিত হই। এর তিন-চার মাস পরে সার্কুলারটা আসে। প্রথম শিক্ষক নিবন্ধনে ‘ব্যাংকিং’ ও ‘হিসাবরক্ষণ’ বিষয় না থাকায় ব্যবস্থাপনার নিবন্ধিতরা ‘ব্যাংকিং’ ও ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন’ বিষয়ে ঢুকতে পারবে। ‘হিসাববিজ্ঞানে’র নিবন্ধিতরা ‘হিসাবরক্ষণে’ ঢুকতে পারবে। এ সুযোগ একবার দিয়েছিল বিধায় আমি ‘ব্যাংকিং’ না ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন’ বিষয়েও ঢুকতে পারতাম।” ২০০৯ সালে ব্যাংকিং বিষয়ে আপনি এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না এমর্মে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর থেকে চিঠি এসেছিল প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ধরণের চিঠি আসেনি। ৩০ শতাংশ মহিলা কোঠায় পূরণ না থাকায় এমপিওভুক্তি না হওয়ার চিঠির কথা জানান তিনি।