শুভ তংচংগ্যা, বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি: ইতিহাসে বাংলাদেশের গণমানুষ সবচেয়ে বীরত্বপূর্ণ ও গৌরবময় অধ্যায় রচনা করেছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। শুধু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ তো নয়, বাঙালি প্রাণপণ যুদ্ধের মাধ্যমে শক্তিশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে সেই যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। অঞ্চলভিত্তিক খণ্ড যুদ্ধজয়ের দু-একটি দৃষ্টান্ত অতীতে থাকলেও ভাষাভিত্তিক বাঙালিত্বের পরিচয়ে এবং বাঙালি জাতীয়তার ভিত্তিতে এমন শৌর্য-বীর্যময় বিজয় লাভ বাঙালির জাতীয় জীবনে আগে কখনো ঘটেনি। অথচ ১৯৭১ সালের এ যুদ্ধ ছিল এক অসম যুদ্ধ, ভোটযুদ্ধে জয়ী শান্তিকামী নিরস্ত্র বাঙালির ওপরে যুদ্ধবাজ পাকিস্তানি সামরিক শাসকের চাপিয়ে দেওয়া একতরফা যুদ্ধ।
২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্বর পাকিস্তানি সৈনিকেরা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পৈশাচিক হত্যালীলায় মেতে ওঠে, অগ্নিসংযোগ লুণ্ঠন আর নারী নির্যাতনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে চরম ত্রাস সৃষ্টি করে। দুঃসহ এই জীবন-মরণ সংকটের মুখে বাঙালিকে আত্মরক্ষার তাগিদেই ঘুরে দাঁড়াতে হয়, সত্যিকারের যুদ্ধের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হয় এবং মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য প্রাণ বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। যুদ্ধবিমুখ নিরস্ত্র বাঙালির ঐক্যবদ্ধ শক্তি, সাহসিকতা ও প্রবল দেশপ্রেমের কাছে আধুনিক যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী পাকিস্তানি সৈন্যের পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির বিজয়, সার্থক হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১-বিজিবি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে ব্যাটালিয়নের ফুলতলি বিওপির আওতাধীন ফুলতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে।
উক্ত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ও জোন কমান্ডার লে. কর্নেল রেজাউল করিম শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করে।
কম্বল বিতরণের পাশাপাশি একই সময়ে ১১ বিজিবির মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন রাফিউস সানীর তত্ত্বাবধানে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়। মেডিকেল ক্যাম্পেইন চলাকালীন প্রায় ৩৮০ জনের অধিক স্থায়ী বাসিন্দাদের মাঝে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও বিনামূল্যে ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
শীতবস্ত্র বিতরণ ও মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপনের জন্য অধিনায়কসহ আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধিনায়ক লে. কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, ১১-বিজিবি সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি দীর্ঘকাল যাবত আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্গম সীমান্ত ঘেষা অঞ্চল গুলোর অন্যতম। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পগুলোতে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ১১-বিজিবি।