স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনার সদর উপজেলায় অনলাইন প্রাথমিক শিক্ষক বদলীতে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের গত ৮ নভেম্বর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান মো. রেজাউল করিম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন এর বিরুদ্ধে বদলীতে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মোছা. উম্মুল খাইয়ির ফাতিমা আক্তারের স্বামী নেত্রকোনা পৌরশহরের মাহমুদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদ ইবনে মিজান।
১৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার অভ্যন্তরে ১৫ দিনের সুযোগ রেখে অনলাইনে বদলি আবেদন শুরু হয়। পরবর্তীতে আরও সময় বাড়িয়ে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। ৭ নভেম্বর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বদলীর আদেশে দেখা যায়, বিয়ারালী রেজিষ্টার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নিগার সুলতানা লিজাকে নেত্রকোনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়। নিগার সুলতানা লিজা ২০১৬ সালের জুনের ২৭ তারিখ বিয়ারালী রেজিষ্টার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বিদ্যালয়টি তার স্থায়ী ঠিকানা হতে আট কিলোমিটার দূরত্বে এবং মোছা. উম্মুল খাইয়ির ফাতিমা আক্তার ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখে শিমুলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বিদ্যালয়টি তার স্থায়ী ঠিকানা হতে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান।
নিগার সুলতানা লিজা ও মোছা. উম্মুল খাইয়ির ফাতিমা আক্তার নেত্রকোনা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর আবেদন করলেও দুরত্ব এবং চাকরিতে যোগদানে উম্মুল খাইয়ির ফাতিমা আক্তার সিনিয়র হওয়ার পরেও স্বজনপ্রীতির কারণে মোছা. উম্মুল খাইয়ির ফাতিমা আক্তার বদলী না করে নিগার সুলতানা লিজাকে বদলীর আদেশ দেন।
অভিযোগকারী শিক্ষক মো. আসাদ ইবনে মিজান বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ভুক্তভোগী মোছা. উম্মুল খাইয়ির ফাতিমা আক্তার বদলীর সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি এর প্রতিকার দাবী করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান মো. রেজাউল করিম বলেন, মোছা. উম্মুল খাইয়ির ফাতিমা আক্তার বদলীর জন্য যে তিনটি বিদ্যালয়ের নাম পছন্দের তালিকায় দিয়েছিলেন তাতে একটি বিদ্যালয়ে শূন্য পদ না থাকায় তার আবেদন বাতিল করা হয়েছিল। এখানে কোনো অনিয়ম বা স্বজপ্রীতি করা হয়নি।
কিন্তু মোছা. উম্মুল খাইয়ির ফাতিমা আক্তারের বদলীর আবেদনের তথ্য থেকে জানা যায়, বদলীর জন্য পছন্দকৃত তিনটি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতেই একটি করে শূন্য পদ রয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জারিকৃত বদলির নীতিমালার (৩.৩ নম্বর) শর্তের বেড়াজালে বদলির আবেদন করতে পারেননি অধিকাংশ শিক্ষক। শর্তে বলা হয়েছে একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০-এর বেশি হলে আবেদন করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ যে বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের বিপরীতে ২০১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে সে বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বদলির আবেদন করতে পারবেন না।
অন্যদিকে পাঁচজন শিক্ষকের বিপরীতে ২০০ জন শিক্ষার্থী আছে সে বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনলাইনে বদলির আবেদন করতে পারবেন। অতিরিক্ত একজন শিক্ষার্থীর জন্য বদলি থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে অনেক শিক্ষক।
সরেজমিনে সদর উপজেলার বড়কাটুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে ছয় জন শিক্ষকের স্থলে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য, একজন সহকারী শিক্ষক ডিপিএড প্রশিক্ষণে রয়েছেন। সহকারী শিক্ষক ফারজানা আক্তার তন্নী ২০১৬ সালে বিদ্যালয়ে যোগদান করেই সংযুক্তিতে (ডেপুটেশন) অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছেন। সংযুক্তি বাতিল না করেই গত ৭ নভেম্বর ফারজানা রোকন তন্নীকে ছদ্দুমিয়া রেজিষ্টার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছে। অপর সহকারী শিক্ষক সুরমা আক্তার ২০০৩ সালে চাকরীতে যোগদান করেন এবং ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান কর্মস্থলে রয়েছেন। সুরমা আক্তারকে হাত কুন্ডলী রেজিঃ বেঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলী করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে সহকারী শিক্ষক বলেন, চাকরীতে যোগদানের পর থেকেই ফারজানা রোকন তন্নী সংযুক্তিতে সুবিধা ভোগ করছেন এবং সংযুক্তি বাতিল না করেই অদৃশ্য ক্ষমতার বলে তিনি বদলী হয়েছেন। বদলী নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলীর কোনো সুযোগ না থাকলেও অদৃশ্য ক্ষমতার বলে সুরমা আক্তারকে হাত কুন্ডলী রেজিষ্টার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলী করা হয়েছে।
সদরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, অনলাইন বদলীতে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলীর কোনো অপসন না থাকলেও বড়কাটুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুরমা আক্তারকে হাত কুন্ডলী রেজিষ্টার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলী করা হয়েছে।
২০১৬ সালে সহকারী শিক্ষক ফারজানা রোকন তন্নী বড়কাটুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই সংযুক্তিতে অন্য বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ফারজানা রোকন তন্নী সংযুক্তি বাতিল না করেই অন্য বিদ্যালয়ে বদলীর বিষয়ে অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সদরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, বদলীর ক্ষেত্রে সংযুক্তি বাতিল করতে হবে কিনা এ বিষয়ে সঠিক তথ্য তার জানা নাই।
জেলার সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, বদলী নীতিমালায় প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলীর কোনো অপসন না থাকলেও বদলীতে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলীর সুযোগ দেওয়া হয়েছে।