বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার প্রথম চালান পৌঁছেছে।
শুক্রবার বিকেলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এম ভি আকিজ হেরিটেজ’ নামের একটি জাহাজ মোট ৩৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বন্দরের হাড়বাড়িয়ায় পৌঁছেছে। সকাল থেকে এসব কয়লা খালাসের কাজ শুরু হয়েছে।
চুক্তির আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে এসব কয়লা আমদানি করা হয়েছে উল্লেখ করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ তরফদার বলেন, “৩১ জুলাই এম ভি আকিজ হেরিটেজ নামের একটি জাহাজ ৫৪ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে ১৮ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন কয়লা খালাস করা হয়।
তারপর রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৩৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বন্দরের হাড়বাড়িয়ার ১১ নম্বর বয়ায় এসে নোঙর করেছে।ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে বাগেরহাটের রামপালে, যার কাগুজে নাম ‘মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট’।
দেড়শ কোটি ডলারের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়নের বড় অংশের জোগান দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস (বিএইচইএল) এই নির্মাণ কাজ করছে।
ভারতের এনটিপিসি লিমিটেড ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে ফিফটি-ফিফটি অংশীদারত্বের এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়।
রামপাল উপজেলার সাপমারি-কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠী এলাকায় ১৮৩৪ একর জমির ওপর এই প্রকল্পের একটি ইউনিটের উৎপাদনে যেতে বয়লার, টারবাইন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, কুলিং টাওয়ার, জেটি, কোল শেড ইয়ার্ড নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম ইউনিটের কমিশনিং এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার চুক্তি থাকলেও তা হয়নি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা রয়েছে। এ সময় রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনে আশাবাদী বাংলাদেশ।
এই আলোচনার মধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি কয়লার প্রথম চালান এসে পৌঁছেছে। ২০ জুলাই ইন্দোনেশিয়ার তানজুম ক্যাম্ফা বন্দর ছাড়ে কয়লাবোঝাই জাহাজটি।
জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেডের (বসুন্ধরা গ্রুপ) ব্যবস্থাপক খন্দকার রিয়াজুল হক বলেন, “চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিএফপিসিআইএল) সঙ্গে বসুন্ধরা মাল্টিট্রেডিং লিমিটেডের কয়লা ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, মোট তিন লাখ টন কয়লা কেনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চালানে এসেছে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা।”
বিএফপিসিআইএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আনোয়ারুল আজিম বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি কয়লা আসা শুরু হয়েছে। কয়লা আসায় চলতি মাসেই আমাদের প্রথম ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় ইউনিটটিও উৎপাদনে যাবে। এরই মধ্যে ওই কেন্দ্রের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।”
আল্ট্রাসুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি (কয়লা) অনেক কম লাগবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে একইদিনে দেশের আরেক মেগা প্রকল্প পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যও মালামাল এসেছে বলে অন্য আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
দ্যা মেইল বিডি/খবর সবসময়