তানভীর আহমেদঃ মনির মিয়া (৪৫)। পেশায় দিনমজুর। যখন যে কাজ পান তাই করেন। নিজস্ব কোনো জায়গা জমি নেই! অন্যের জমিতেই ছোট্ট একটি ঘর তৈরি করে সেখানেই দিন কাটতো তার। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর বাজারের (দঃ) পাশে পাঠলাই নদীর তীরে তার বাড়ি। স্বল্প আয়ে এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী (দ্বিতীয়) নিয়ে ভালোই কাটছিলো তাদের সংসার। কিন্তু স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তার ঘরবাড়ি সহ সবকিছুই। পরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। আজও অন্যের বাড়িতেই দিন কাটছে তার পরিবারের। কবে নতুন ঘর তৈরি করে বাড়িতে ফিরবেন এমন দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে মনির মিয়ার। বলা যায় গেল ১৬ জুন রাতে ভয়াবহ বন্যার পানিতে সবকিছু হারিয়ে মনির মিয়া এখন একদম নিঃস্ব! এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কান্না জড়িত কন্ঠে মনির মিয়া বললেন,‘দিন আনি দিন খাই! কোনে দিন কাম (কাজ) মিলে, আবার কোনো দিন কাম (কাজ) মিলেও না! এলাকায় বেশি কাম-কাজ নাই! তবু্ও টেনেটুনে কোনোভাবে সংসার টা চলছিলো। পরিবার নিয়া থাকার জন্য গতবছর অন্যের একটু জায়গা (জমি) চাইয়া (চেয়ে) লইছি। পরে ঐ যায়গায় ছোট্ট একটা ঘর বানাইছি। কিন্তু এই সর্বনাশা বন্যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘরবাড়ি, বাঁশ, পালা, টিন-কাঠ, আসবাবপত্র সহ সব পানিতে ভাইস্সা গেছে। বানের পাইন্নে বাড়ির ভিটায় চারপাশে খাল অইয়া গেছে, এমনকি ভিটার অর্ধেক মাটি পানির সাথে ভেসে গেছে। ঘরে পানি উঠার পরে গেল ১৬ জুন বৃহস্পতিবার রাইতে ছেলে-মেয়ে ও বউরে লইয়া বাড়ি ছাইড়া অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়া কেনো রকম জান বাঁচাইছি। এক কাপড়েই পরিবারের সবাই বাড়িঘর ছাড়ছি। এখনো পরের বাড়িতেই থাকতাছি। বাড়িতে ফেরার মতো কোনো ক্ষমতা নাই’। তিনি আরো বলেন, ‘মেম্বার চেয়ারম্যান’রা শুধু মিথ্যা আশ্বাস দেয়! তারা শুধু কয় তুমাগো ঘর বানানোর লাগি টিন-বাশ দিমুনি। পরে আর তারার কথা ঠিক থাকে না। একমাত্র ঘর-বাড়ি ঠিক করার লাগি সরকার থাকি আমারে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হইছে। এছাড়া আর কেউ কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করে নি। কিন্তু ঐ টাকায় ঘর ঠিক করা তে দূরের কথা বাড়ির ভিটায় মাটিও দিতাম পারতাম না! সরকার অথবা কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি একটা নতুন ঘর তৈরি করে দিতো তাহলে হয়তো ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আর অন্যের বাড়িতে থাকা লাগবে না’। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এমন শোচনীয় পরিস্থিতির শিকার শুধু মনির মিয়াই নন, উপজেলার আরও অনেক পরিবার। বন্যার কারণে বসতবাড়ি, ভিটা, আসবাবপত্র সহ সবকিছু বানের পানির তোড়ে ভেসে গেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বন্যায় সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছে ঐ পরিবারগুলো। এসব মানুষের জন্য সহায়তার হাত না বাড়ালে তারা মাথা গোজার ঠাঁইটুকু পাবেন না বলে মনে করছেন অনেকেই। একই গ্রামের শাহের মিয়া বলেন, ‘খুউব কষ্ট কইরা একটা ঘর করছিলাম। ঘরডা বন্যায় ভেঙে গেছে। ঘরের ধান-চাউল, কাপড়-চোপড়, কেতা-বালিশ সবতা পাইন্নে ভাসাইয়া নিছে। পোলাপান নিয়া তখন কেনোরকম আশ্রয় নিয়েছি আশ্রয় কেন্দ্রে। ঘরটা ঠিক (মেরামত) করলেও অনেক টাকা লাগবে কিন্তু ঘর ঠিক যে করমু সেই ক্ষমতা নাই, টেকা-পয়সা কোন কিচ্ছুু নাই। কি করবো বুঝে আসছে না।’ তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান কবির বলেন,‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১ম ধাপে সরকারীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ শত আটটি পরিবারের মাঝে নগদ দশ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়েছে। ২য় ধাপে প্রায় দুই শত ষাটটি পরিবারের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়৷’ তিনি আরো বলেন,‘এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত আরো ৭৫টি পরিবারকে ঢেউটিন ও নগদ টাকা দেওয়া হবে। তারপর যদি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারী কোনো সহযোগিতা আসে তাহলে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment