স্টাফ রিপোর্টার : অর্থের বিনিময়ে মহাসড়ক অতিক্রম করে ১১ কেভি বিদ্যুৎের লাইনের খুঁটি বসানো হয়েছিল অবৈধ পন্থায়। বিষয়টি জানাজানি হলে ফিটিংস ও তার অপসারন এবং রাতের আঁধারে গোড়া থেকে নিখুঁতভাবে ভেঙে ফেলার পর ভোরের আগে সরিয়ে ফেলা হয়েছে স্থাপিত খুঁটিটি। এঘটনার ১৫ দিন ও জাতীয় দৈনিকে গত ৯ জুলাই ‘দুর্নীতি ঢাকতে রাতে আধারে বিদ্যুৎের খুঁটি অপসারণ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের ১৩ দিন পার হলেও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বৈদ্যুতিক খুঁটি নষ্ট করার পেছনে কে বা কাহারা জড়িত এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় করা হয়নি এফআইআর (প্রাখমিক তথ্য প্রতিবেদন) বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি)।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত নেত্রকোনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা এফআইআর বা জিডি না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মুসফিকুল হক মুসফিক-এর কাছে মতামত চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘রাষ্ট্রের কোন সম্পদ ধ্বংস বা নষ্ট বা চুরি বা পুড়িয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটলে, অনতিবিলম্বে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলের আওতাধীন থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন।’
তাছাড়া তিনি বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ (২০১৮ সালের ৭নং আইন) এর ধারা ৩৫ উল্লেখ করে আরো বলেন, ‘কোন ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা উপকেন্দ্র বা স্থাপনার কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অথবা বিদ্যুৎ লাইন সামগ্রী, যেমন- পোল (খুঁটি), টাওয়ারের অংশ বিশেষ, কন্ডাক্টর, ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক তার ইত্যাদি চুরি, অপসারণ, বিনষ্ট বা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিসাধন করেন। তাহলে এটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। তার জন্য অপরাধীরা দুই-পাঁচ বছরের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।’
এব্যাপারে জানতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী একপ্রকার নিজের দায়ভার এড়িয়ে বলেন, প্রকল্পের লোকজন এ খুঁটিটি আমাদের কাছে হ্যান্ডওভার করে নাই। কিভাবে কাজ করে ভেঙেছে প্রকল্পের লোকজনের কাছ থেকে সঠিক তথ্যটা নেন।
প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানের কাছে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ময়মনসিংহের পরিচালন ও সংরক্ষন সার্কেল-২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান জানান, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদের একটি খুঁটি কিসের জন্য ভাঙল এটা জানতে প্রকল্পের পিডি মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। দেখি তারা কি পদক্ষেপ নেন।’ রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট হলে অতিদ্রুত সম্ভব থানায় এফআইআর বা জিডি করার নিয়ম এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আমার মনেই ছিল না, নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলছি।’
চলতি মাসের গত ৬ জুলাই বিকেলে নেত্রকোনা পৌরশহরে পারলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সমাজসেবা নতুন ভবনের সামনে স্থাপিত খুঁটি থেকে তার ও বৈদুতিক সরঞ্জাম খুলে ফেলা হয়। ওইদিন রাতেই খুঁটিটি গোড়ালি থেকে নিখুঁতভাবে কেটে ভেঙে ফেলার পরদিন ভোরের আগেই ওইস্থান থেকে খুঁটিটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গত ৭ জুলাই নেত্রকোনা নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আপনার (প্রতিবেদকের) কাছ থেকে তো মাত্রই শুনলাম। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
দুই সপ্তাহ পার হলেও রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্টের পেছনে কে বা কাহারা জড়িত এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় এফআইআর বা জিডি করা হয়নি। কেন খুটিটি স্থাপন করার সপ্তাহখানেক পরে ভেঙে এবং স্থাপতি খুঁটিতে তার ও ফিটিংস রাতের আধারে অপসারণ করা হলো এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।