স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ঈদ উপলক্ষে বিতরনের ভিজিএফের চালসহ ইঞ্জিন চালিত মালবাহী নৌকা আটক করেছে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের সাথে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে নৌকার মাঝি ও লোকদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। নৌকায় থাকা তিনজনের মধ্যে গজামারি এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে আরমান (১৯) নামে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপার্দ করে স্থানীয়রা। একই এলাকার দুদু মিয়ার ছেলে জজ মিয়া নামে একজন গণধোলাইয়ের শিকার হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। আরেকজন পালিয়ে যান। তার পরিচায় পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নে মেদিকান্দা এলাকার মেদি খালের ব্রিজের কাছ থেকে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে নৌকাটি আটক করে। স্থানীয়রা জানায় নৌকাটি আটকের সময় নৌকায় থাকা লোকজন অনেক বস্তা চাল পানিতে ফেলে দিয়েছে। তবে কত বস্তা চাল ছিল তার রহস্য রয়ে গেছে।
নৌকা মাঝি আরমান এ সময় স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে খারনৈ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের চাল ও ৩০ কেজি ওজনের পাঁচশো বস্তা চালের কথা স্বীকার করেছে। তবে কোথা থেকে ও কোথায় যাবে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন মাঝি এলাকাবাসী জানায়।
খারনৈ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুল হক তার ওপর আরোপিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি এই চাল কেন নিব। ট্যাগ অফিসার ছিল, আমরা বিতরন করেছি। আমি যড়যন্ত্রের শিকার। দুপুরের দিকে যখন ঝগড়া হয়েছে। তখন সেনাবাহিনীর লোকেরা এসে ভূক্তভোগীদের চাল মেপে দেখেছে। যে পরিমান চালের কথা শুনছি তা-তো আমার ঘরেই ছিল না। তাহলে এই চাল আমি দিব কোথা থেকে। নৌকার মাঝি আমাকেও চিনে না, আমিও তাকে চিনি না। আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ যড়যন্ত্র করে ফাসানো চেষ্টা করেছে। ট্যাগ কর্মকর্তা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি মাস্টাররোলে স্বাক্ষর না করেই চলে গেছেন। এখানে তো সেনাবাহিনীর লোকেরাও ছিল। ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে আমরা বিতরন করেছি। আমার এখানে ১৫ বস্তা চাল মজুদ রয়েছে। এখান থেকে তিন কি.মি. দূরত্বে নৌকা আটক করা হয়েছে। কারা কলমাকান্দা থেকে চাল এনে এ ঘটনা ঘটিয়েছি এটা তো আমি জানি না। দুপুরে দিকে চান মিয়া, হাসেম, জামালসহ কয়েকটা ছেলে এসে কার্ড বিক্রি করতে পারে নাই। পরে ঝগড়া করেছে। তারাই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং এর জের ধরে করে নাটক সাজিয়েছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজার মো. তরিকুল ইসলাম জানান, সারাদিন চাল বিতরনের পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চলে আসি। দুই ট্যাগে ২৮ বস্তা ও এক-দুই বস্তা খোলা অবস্থায় ছিল তা দেখে এসেছিলাম।’ আপনার উপস্থিতি ছাড়া চাল বিতরন ও মাস্টার রোল তৈরি করার নিয়ম নেই এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তা ঠিক আছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীও ছিল তাদের উপস্থিতিতে চাল বিতরন করে থাকতে পারে। মাস্টাররোলে আমি স্বাক্ষর ছাড়াই চলে আসি।’
কালমাকান্দা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খোকন কুমার সাহা বলেন, নৌকায় ৩০ কেজি ওজনের ১২৮ বস্তা চাল পাওয়া গেছে। পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম মেদি খাল থেকে ভিজিএফের চাল উদ্ধারে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জানা যাচ্ছে বাউসাম এলাকার থেকে চাল আনা হয়েছে। লোকজন আটক করার পর পুলিশ নিয়ে উপস্থিত হই। স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত ছিল। পরে জব্দ করে পুলিশের হাতে দিয়ে আসা হয়েছে। থানায় মামলা করার জন্য বলা হয়েছে। কারা জড়িত তদন্ত করে দেখতে হবে। স্পটে গণনা করা সম্ভব হয়নি। কত বস্তা চাল ছিল তা থানায় আনার পর গণনা করে বলা যাবে। আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার জ্ঞান ফিরলে পরিচয় জানা যাবে।