করোনা মহামারির প্রায় আড়াই বছর পার হতে চলেছে। মাঝে প্রায় তিন মাস সংক্রমণ কমে এলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে। ভারত, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার বিস্তার ঘটছে। গত ১৪ দিনের তথ্য–উপাত্ত এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনালে হেলথ সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, জুনের শুরু থেকেই করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এই এক মাসে দেশটিতে ২৩ লাখ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়, যা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিই ইঙ্গিত করছে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরার পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক লিন্ডা বল্ড বলেন, ‘আমরা বর্তমানে খুবই বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি। সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।’
বিএ-৪ ও বিএ-৫ ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জাপানের একটি গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। করোনার এই ধরন ফুসফুসকে সহজেই আক্রান্ত করতে পারে। তবে অমিক্রনের তুলনায় এটি বেশি ক্ষতিকর কি না, সে বিষয়ে গবেষণায় সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি।
যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি বলছে, গত এপ্রিল থেকে যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু এই সংক্রমণ কেন বাড়ছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সংস্থাটি মনে করছে, করোনা টিকার কার্যকারিতা কিছুটা কমে যাওয়ায় এমনটা ঘটতে পারে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে ১০ হাজার ৮১ জন রোগী ভর্তি। তাঁদের মধ্যে গত এক সপ্তাহে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি ভাঙা হাড় ও স্ট্রোকজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোলের ২৫ জুন পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপের ২৩টি দেশের মধ্যে ২১টিতেই ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে করোনা শনাক্তের হার বেশি। সংক্রমণের হার আগের সপ্তাহের তুলনায় জুনের শেষ সপ্তাহে ২৭ শতাংশ বেড়েছে। চার সপ্তাহ আগে এই সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।
যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপের অন্যান্য দেশেও সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য বিএ-৪ ও বিএ-৫ ধরনকে দায়ী করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইউরোপের প্রতি ১০টি দেশের মধ্যে সাতটিতেই এ ধরনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
ভারতে বাড়ছে সংক্রমণ
ভারতেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। দুই সপ্তাহ আগে দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ১৩ হাজার ২১৬ করোনা রোগী শনাক্ত হত। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১৭ হাজার ৯২ জন শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার বেড়েছে ২৯ শতাংশ। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি পশ্চিমবঙ্গেও দেখা গেছে। রাজ্যে ১৪ দিন আগে দৈনিক ২৩৫ জন শনাক্ত হতো। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
রয়টার্সের হালনাগাদকৃত তথ্য বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান ও ইরাকেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। মহামারি শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অন্যান্য দেশের পরে ইরানে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যু হতো। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলেও ১২ দিন ধরে ইরানে আবারও সংক্রমণ বাড়ছে। অন্যদিকে তিন সপ্তাহ আগের তুলনায় ইরাকে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৯০০ রোগী বাড়ছ। সংক্রমণ বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওয়েবসাইট অনুযায়ী, মোট করোনা শনাক্তের দিক দিয়ে শীর্ষ দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রথম (৮৬,৪৩৩,৭২৩)। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে ভারত, ব্রাজিল, ফ্রান্স ও জার্মানি। অন্যদিকে ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে করোনা শনাক্তের দিক থেকে শীর্ষ পাঁচটি দেশে হলো—যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রাজিল। এরপরেই রয়েছে চীনে।