স্টাফ রিপোর্টার: টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার মধ্যেই আরও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ ও ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমার উপরে উঠে গেছে সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানিও। গতকাল সোমবার সকালের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা-কুশিয়ারাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং ভারী বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন ধরে সুনামগঞ্জ ও ভারতের মেঘালয়ে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সুনামগঞ্জের নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিাতি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের তথ্য দিয়ে প্রকৌশলী বলেন, জেলার লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, ছাতকে ১২০ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ সদরে ৭৯ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকেও জেলায় মাঝারি ও হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং উজানেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই অবস্থাা চললে পানি আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন স্থাানীয়রা। এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা সাব-মার্জিবল সড়ক ডুবে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে বরাবরের মতো এই সড়কটি প্রথমে প্লাবিত হয়। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলা শহরের নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত সাহেববাড়ি ঘাট ও জগন্নাথবাড়ি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই এলাকার প্রধান সড়ক ডুবে গেছে। সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, সোমবার থেকে আগামী তিন দিন সুনামগঞ্জে ও সুনামগঞ্জের উজানে টানা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এতে আবারও বন্যা পরিস্থিাতির সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সারা দেশেই প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কিছু স্থাানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। যার প্রভাবে দেশের ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ধরলা ও পদ্মা নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টা বাড়তে পারে। তবে তিস্তা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিাতিশীল থাকতে পারে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অনেকস্থাানে তীর উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢোকা শুরু হয়েছে। এতে নদী তীরের বাসিন্দারা ফের বন্যার আশঙ্কা করছেন। প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গতকাল সোমবার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর আরপিন নগর, বড়পাড়া, সাহেববাড়ি ঘাট, পুরানপাড়া সড়কে পানি উঠে গেছে। এছাড়াও শহরের নিকটবর্তী গৌরারং ইউনিয়নের অচিন্তপুর, রাজারগাঁও লক্ষণশ্রী, বড়ঘাট, লালপুর, রাধানগর, সুরমা ইউনিয়নের সদরগড়, অক্ষয়নগর, ইব্রাহিমপুর এলাকার রাস্তাঘাট পুবে গেছে। রাজারগাঁও গ্রামের কবিল মিয়া বলেন, আমাদের গ্রাম অর্ধেক নদী গর্বে চলে গেছে। এবার আমাদের বাড়িটি হুমকির মুখে। রাতে আল্লাহ আল্লাহ করি। আমাদের নদীর পাড়ে বেরিবাঁধ না থাকায় সুরমা নদীর পানি এসে ঘরে প্রবেশ করে।
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment