স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্তর সহ বেত্রাঘাত। এদের মধ্যে কাওসার নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় তিনদিন ধরে পূর্বধলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত শিক্ষক মজিবুর রহমানের ওপর আরো অভিযোগ উঠেছে একই দিনে তিনি আরো দুই শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেছেন। তারা হলো- দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র নিরব ও প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মিম।
অভিযুক্ত শিক্ষক মজিবুর রহমান উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বিলজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। তিনি একই ইউনিয়নের সানকিডর গ্রামের বাসিন্দা।
এঘটনায় গুরুতর আহত কাওসারের বাবা আব্দুর রউফ বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও একই দিন বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে শিক্ষক মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জমা দেন।
বুধবার (১ জুন) সকালে পূর্বধলা থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতেই শিশু নির্যাতন অপরাধে অভিযোগটি থানায় রেকর্ডভূক্ত করা হয়েছে। আসামিকে ধরতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কাওসারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার মজিবুর স্যার পাঁচটি অংক করতে দেন। একটি অংক করতে না পারায় স্যার গালে চড়থাপ্পর মারেন। পরে লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিঠাতে থাকেন। তিন ধরে হাসপাতালে আছি। লাঠির আঘতে পিঠের হাড়ে ব্যাথাসহ বাম হাত নাড়াতে পারছে না বলে জানায় ভিকটিম।
কাওসারে বাবা আব্দুর রউফ জানান, ছেলে অজ্ঞান হওয়ার খবর পেয়ে স্কুলে ছুঁটে যায়। দেখতে পাই ছেলের গালে নীলচে লাল রং ধারণ করে আছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন। বাম হাত নাড়াতে না পারায় পূর্বধলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। এক্সরে করা হলে দেখা যায় বাম হাতের পেছনে পিঠের হাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। সঠিক বিচার চেয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছি। এছাড়াও ইউএনও ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তা কাছেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিলজোড়া গ্রামের আকবর আলী জানান, ওই শিক্ষক একই দিনে কাওসারসহ দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র পানিশানা গ্রামের মোনায়েম খাঁর ছেলে নিরব ও বিলজোড়া গ্রামের আল আমিনের মেয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী মিমকে বেত্রাঘাত করে আহত করেছে। অতীতেও ওই শিক্ষক (মজিবুর) আরো অনেক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মারধর করার ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই শিক্ষককে আমরা আর এলাকায় দেখতে চাই নাই। এনিয়ে আমাদের গ্রামে উত্তোজনা বিরাজ করছে।
অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক মজিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ‘কীভাবে ঘটছে এখন এটা বলার সুযোগ নাই। সামন্য একটা বিষয়, এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার লোকজন হাসপাতালে ছাত্রটিকে দেখতে গেছে। আমিও স্কুলে মাফ-টাফ চাইছি। এই বিষয়টা নিয়ে আর কিছু বলতে চাইছি না।’ অন্য একটা আলোচনায় আছি এ কথা বলে সংযোগ কেটে দেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, বিষয়টি অবগত হওয়ায় আজ (বুধবার) পূর্বধলায় এসেছি। থানায় মামলা হয়েছে তা জানতে পেলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মামলা হলে রায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।