স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনার সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নে চন্দন মিয়া নামে এক ইউপি সদস্যের (মেম্বার) বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর দেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে করা অভিযোগে উল্লেখ, ওই মেম্বার একবছর আগে ৩০ জনের কারো থেকে ৬০ হাজার আবার কারো কাছ থেকে একলক্ষ এভাবে বিপুল পরিমান অর্থ আদায় করেন। কিন্তু তাদের কেউ এখন পর্যন্ত ঘর পাননি।
ইউপি সদস্য চন্দন মিয়া শ্রীপুর বালি গ্রামের কিতাব আলীর ছেলে। তিনি ওই ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৭নং ব্লকের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি ইউপি আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ঘনিষ্টজন ছিলেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৮ মে) বিকেলে এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা আক্তার অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত মঙ্গলবার অভিযোগীকারীদের কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে। তবে ওই ইউপিতে কোন ঘরেরই এখনো কাজই হয়নি। অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
শ্রীপুর গ্রামের আ. রাজ্জাকের ছেলে ব্যবসায়ী ঝুটন ও একই গ্রামের আরেক কৃষক পলাশ বেপারি তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে এলাকার কয়েকজন গরীব, দুস্থ ও ভূমিহীন এদের কাছ থেকে ঘর দিবে বলে টাকা নেয়। এই অর্থ ও চন্দন মিয়া তার নিজ হাত থেকে অর্থ খরচ করে একটি ঘরের আংশিক কাজ করান। সরকার পক্ষের কোন লোক বা কর্মকর্তা পরিদর্শন করতে আসছে না তাদের এমন প্রশ্নে মেম্বার জানায়, কর্মকর্তারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে ঘর তৈরি করে দেয়ার। তারাও আসবেন পরিদর্শন করতে। এর কিছু দিন পর এক ভদ্রলোক গাড়ী করে আসেন। সেই ভদ্রলোক সবাইকে বলে যান আপনারাও টাকা দেন, আমি ঘর করে দিব। এই প্রলোভনে এলাকার ৩০-৩৫ জন অসহায় গরীবরা কেউ গরু বিক্রি আবার কেউ ঋণ করে টাকা মেম্বারের হাতে তুলে টাকা দেন।
শ্রীপুর বালি গ্রামের অভিযোগকারী হলুদা জানান, স্বামী ছেড়ে চলে যাবার পর তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। কর্মসৃজন প্রকল্পের মাটি কাটি ও অন্যের ঘরে কাজকর্ম করে সংসার চালাই। এক ছেলে মানুষের ঘরে কামলা (শ্রম) দেয়। ঘর পাব বলে দুজনের কষ্টের জমানো ৬০ হাজার টাকা গত ইউপি নির্বচনের (গত বছরের নভেম্বর মাস) দুইমাস আগে চন্দনের হাতে তুলে দেই। ঘর পায়নি।
একই গ্রামের আরেক অভিযোগকারী আব্দুর রশিদ জানান, ঘর পাবার আশায় গরু বিক্রি ও কিস্তিতে ঋণ নিয়ে চন্দন মেম্বারের কাছে ৯৫ হাজার টাকা দেই। ঘর পেতে দেরি দেখে বাচ্চা হওয়ার সময় সিজারের জন্য মেম্বারের কাছ থেকে দুইধাপে ১০ হাজার টাকা নেই। এখনো ৮৫ হাজার টাকা তার কাছেই আছে।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য চন্দন মিয়া বলেন, আজ (বুধবার) জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে এসেছি। তদন্ত করার পর বিস্তারিত পরে আপনার (প্রতিবেদক) সাথে কথা বলা হবে বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ সেলিম জানান, শুধু আপনাদের কাছে না, এ বিষয়ে আমার কাছেও অনেকে অভিযোগ করেছে। ইউএনও মহোদয়ও আজ (বুধবার) সকালে বিষয়টির খোঁজ নিতে বলেছেন।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, অভিযোগটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এর আগে দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের শ্রীপুর বালি গ্রামের কয়েকজন ভূক্তভোগী ৩০ জনের কাছ থেকে ইউপি মেম্বার ঘর দেবার আশ্বাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এই মর্মে গত ১৬ মে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেন এবং এর অনুলিপি পুলিশ সুপার, ইউএনওসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের কাছেও প্রদান করেন তারা।