আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরের তারাগঞ্জে ব্যবসায়ীর দেয়া ভুল কীটনাশক প্রয়োগে পুড়ে গেছে কৃষকের ধানক্ষেত। পরে স্থানীয় মাতব্বরদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষককে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন ওই ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক।
ঘটনাটি ঘটছে উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের লক্ষিপুর মিস্ত্রীপাড়া দিঘীরপার নামক এলাকায়। ফলে এ ঘটনায় ওই এলাকার কৃষকরা হতাশা বিরাজ করছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক আলমগির হোসেন জানান, তার জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। গত শনিবার ধান ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকাতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল পার্শ্ববর্তী দিঘীরপার ইকরচালী “আলিজা ট্রেডাস” এ যান তিনি।
ছত্রাকনাশক ঔষধ রাইনেট চাইলে কীটনাশক ব্যবসায়ী কাটুন থেকে ধানের আগাছা নাশক ঔষধ হাতে দিয়ে ধানক্ষেতে দেয়ার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগের এক দিন পর সকালে গিয়ে দেখেন তার দেড় একরের জমির পুরো ধান চিটে হয়ে গেছে। মরে গেছে ধানের গাছগুলো এবং ঘাস ও লতাপাতাও। এরপর কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাককে ঔষধের বোতল দেখালে তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে কাউকে কোন কিছু না বলার নির্দেশ দেন। এবং আমাকে জমির ধানের মূল্য ক্ষতিপূরণ দিতে চান। কিন্তু এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও ব্যবসায়ী রাজ্জাক ভুক্তভোগী কৃষককে কোন ক্ষতিপূরণ দেননি। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক আলমগির হোসেন।
পরে বিষয়টি স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিরিনা বেগম কে জানালে তিনি এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওই এলাকায় ধানক্ষেত দেখতে যাননি।
কৃষক আলমগির হোসেন বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার তেমন কোন জমিজমা নেই। দিন আনি দিন খাই। আমি মানুষের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে ধারদেনা করে ধান চাষ করেছি। কিন্তু ভুল ঔষধ দিয়ে আমার লিজ নেয়া জমির সব ধান পুড়ে ছাই করে দিয়েছে ওই কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক। ওনার ওই ক্ষতিপূরণ নিয়ে আমার ধারদেনা পরিশোধ করবো না স্ত্রী সন্তানদের খাবারের চিন্তা করবো। পরিবার পরিজন নিয়ে ভবিষ্যতে কী খাবে, কীভাবে বাঁচবে, আর ধার দেনা কীভাবে পরিশোধ করবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই আলমগির হোসেনের।
এ ব্যাপারে কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি তারাগঞ্জ বাজারের নেহা ট্রেডার্স এর মালিক আব্দুর রশিদ এর কাছ থেকে ছত্রাক নাশক ঔষধ নিয়ে আসি। ওনি ভুল করে ছত্রাক নাশক ঔষধের স্থানে আগাছা নাশক ঔষধ দিয়ে দেন। আমি বুঝতে না পেরে কৃষকে জমিতে স্প্রে করতে বলি। ফলে কৃষকের জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিরিনা বেগম জানান, ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু যে সময় আমাকে জানানো হয়েছে রমজান মাসে অফিস তাড়াতাড়ি বন্ধ হওয়ায় খোজ নিতে পারিনি। অফিস চলাকালিন সময়ে আমি পুড়ে যাওয়া ধান ক্ষেত দেখে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া বলেন, আমি আলমগির হোসেনের জমির ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম বলেন, আমি এ বিষয়ে আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আগামীকাল ওই পুড়ে যাওয়া জমির ধান পরিদর্শন করে ওই দুই কীটনাশক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment