স্টাফ রিপোর্টার : ঠিকাদারের লোকজন শ্রেণি কক্ষে না থাকার চিঠি ইস্যু করা থাকলেও কক্ষ দখল করে থাকছেন ঠিকাদারের লোকজন ও মজুদ করে রাখা আছে নির্মান সামগ্রী। এতে করে আরেক কক্ষের মেঝেতে শিশু শ্রেণি ও বেঞ্চে বসা প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এবং তাদের একসাথে চলছে দুই শ্রেণির পাঠদান। করোনাকাল শেষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও কক্ষের অভাবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। এমনি দৃশ্য দেখা গেছে নেত্রকোনার সদর উপজেলায় মেদনী ইউনিয়নে নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এদিকে দুই নারী শিক্ষক যথাসময়ে বিদ্যালয়ে আসলেও প্রধান শিক্ষকসহ দুই শিক্ষক উপস্থিত হলেন সকাল ১০টার পরে।
প্রাথমিক স্কুল সকাল ৯টা থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার বিধান থাকলেও কিন্তু রমজান মাসের জন্য তা সাড়ে ৯টায় নির্ধারিত রবিবার সকালে এমনটা জানালেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
জানা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন অরবিন্দু সরকার এবং চারজন সহকারি শিক্ষক হলেন- আব্দুল গনি, মোছা. দিলোয়ারা আক্তার, মো. দুলাল উদ্দিন আকন্দ ও হাবিবা আক্তার। দুলাল উদ্দিন নামে এক শিক্ষক ট্রেনিংয়ে আছেন।
গত শনিবার (৯ এপ্রিল) সকালে প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে ছুটে আসেন স্কুলের পাশেই বাড়ি সাবেক মেম্বার ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য দৌলত মিয়া। প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত সময়ে স্কুলে আসেন না এমন বিষয়ে তিনি বারবার বুঝাতে চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক আজই দেরি হচ্ছে আসতে। পরে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ দেখালে একপর্যায়ে তিনি সহমত পোষন করেন প্রধান শিক্ষক প্রায়ই যথাসময়ে না আসার বিষয়টি। পরে তিনি বলেন, করোনার সময় স্কুলের নতুন বিল্ডিং কাজ শুরু হয়েছে। স্কুলের স্বার্থে ও সামাজিকতায় ঠিকাদারের লোকদের শ্রেণি কক্ষে থাকতে দেয়া হয়েছে। এটা অনিয়ম ও পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে প্রতিবেদকের প্রশ্নে বলেন, ঠিকাদারের লোকজন রমজানের শেষে শ্রেণি কক্ষ ছেড়ে দিবে।
সরেজমিনে, তিনটি শ্রেণি কক্ষের মধ্যে একটি কক্ষ দখল করে থাকছেন ঠিকাদারের লোকজন ও সেখানে সিমেন্টসহ নির্মান সামগ্রী মজুদ রয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় দোলোয়ারা নামে নারী শিক্ষক এসেই অফিস কক্ষের তালা খুলে পাতাকা উত্তোলন করেন। এরপরেই আসেন আরেক নারী শিক্ষক হাবিবা আক্তার। এক কক্ষের মেঝেতে শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসছে। একই কক্ষের বেঞ্চে বসছে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এভাবে এককক্ষে চলছে একসাথে দুই শ্রেণির পাঠদান। সকাল ১০টার কিছুক্ষণ পরে আসেন প্রধান শিক্ষকসহ আরেক পুরুষ শিক্ষক।
স্কুলের সাবেক ছাত্র অ্যাডভোকেট সোয়েবসহ স্থানীয়রা জানায়, শ্রেণি কক্ষ খোলা ও বন্ধ করা থেকে শুরু করে পতাকা উত্তোলন, চেয়ার-টেবিল পরিস্কার ও বিদ্যালয়ে মেহমান (ভিজিটর) আসলে চা বানানো, ক্লাসে পাঠদানসহ সিংহভাগ কাজই দুই নারী শিক্ষকই করে থাকেন। পুরুষ শিক্ষকরা নির্ধারিত সময়ের পরে এসেও অফিসে বসে কাজ করেন এবং নারী শিক্ষকদের হুট-ফরায়েশ জারি করেন। এমন এক প্রকার লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার দুই নারী শিক্ষক।
নারী শিক্ষক হাবিবা আক্তার জানান, ‘স্যারের আসতে মাঝে মাঝে দেরি হয়ে যায়। রাস্তা ভাঙা ও যানবাহনে আসেন তাই দেরি হয়। জায়গার সমস্যা তাই এক কক্ষে দুই শ্রেণি ক্লাস নিতে হয়।’
‘এক ক্লাসের শিক্ষার্থী অন্য ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রী তারা একে অন্যের দিকে তাকা-তাকি করে। ফলে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনোনিবেশ করাতে সমস্যায় পড়তে হয়’- এমনটা জানালেন আরেক নারী শিক্ষক মোছা. দিলোয়ারা আক্তার।
ঠিকাদারের নিযুক্ত ফোরম্যান (হেড রাজমিস্ত্রী) আ. হেলিম জানান, এ কাজে কত টাকা বরাদ্দ সঠিক তথ্য জানা নাই। তবে প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকার মতো হবে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে কাজ শুরু হয়েছে। আগের সব স্কুলেই এভাবে শ্রেণি কক্ষে থেকে কাজ করেছি। এখানেও সেভাবেই কক্ষে থাকছি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক অরবিন্দু সরকার বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা তাদেরকে মৌখিকভাবে জানিয়ে ঠিকাদারের লোকজনকে কক্ষে থাকতে দিয়েছি। রমজান মাস শেষে তারা কক্ষ ছেড়ে দিবেন। যথাসময়ে স্কুলে না আসার বিষয়ে তিনি বলেন, আজই আসতে দেরি হয়ে গেছে। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালান।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা জিয়াউ হক
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, ঠিকাদারের লোকজন স্কুলের মাঠে নিজেরা চালা ঘর তৈরি করে থাকার বিষয়ে প্রতিটি স্কুলে চিঠি ইস্যু করা আছে। কোন অবস্থাতে শ্রেণি কক্ষ দখল করে বাসস্থান ও মালামাল রেখে পাঠদান ব্যাহত করার নিয়ম নাই। স্কুলে পাঠদান শুরু সকাল ৯টায়, রমজানে তা সাড়ে ৯টায়। এধরনের অভিযোগ শুনে আমি পূর্বধলা উপজেলায় এক স্কুলে সকাল পৌনে ১০টায় হাজির হয়ে চারজন শিক্ষককে হাতেনাতে ধরেছি। বিলম্বে আসায় আজ (রবিবার) তাদেরকে কারণ দর্শানো হবে। নিশ্চিন্তপুর স্কুলের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। সব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।