পাকিস্তানের ইতিহাস বদল হলো না। ইমরান খানও পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারলেন না। তবে তিনি নয়া এক ইতিহাস রচনা করেছেন অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে। এর আগে পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা ভোটে হারেননি। শওকত আজিজ ও বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারা রক্ষা পেয়ে যান। ক্রিকেটার কাম রাজনীতিক ইমরান খান অনেক নাটকীয়তার পর গত মধ্যরাতে দৃশ্যপট থেকে বিদায় নেন। ৩৪২ সদস্যের জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১৭৪টি।
ইমরানের ভাগ্য লেখা হয়ে যায় তখনই। এর আগে আসাদ কায়সার স্পিকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানের রাজনীতি ছিল টালমাটাল। নেপথ্যের শক্তি ছিল তৎপর। রাজনীতির আন্তর্জাতিক কারবারিরাও ছক তৈরি করেছিল নিখুঁতভাবে। ইউক্রেন যুদ্ধের সরাসরি প্রভাবে ইমরান খানকে বিদায় নিতে হলো। এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক নেই। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই ইমরান মস্কো সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন নানাভাবে তাকে বলা হয়েছিল, এটা উপযুক্ত সময় নয়। বৃহৎ শক্তির তরফেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু ইমরান খান কারো পরামর্শ শুনেননি। হয়তো কোনো একটি মহল তাকে ভুল পরামর্শ দিয়েছিল। হবু প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তারা প্রতিশোধের পথে হাঁটবেন না। ইমরান রাতেই ইসলামাবাদ ছেড়ে চলে গেছেন। কেন ইমরান খানের ভাগ্যবিপর্যয় ঘটলো এ নিয়ে বিতর্ক জারি থাকবে বহুকাল। হবে নানা মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ। একটা প্রশ্ন হয়তো অজানাই থেকে যাবে, পাক-সেনাবাহিনী কি ভূমিকা রেখেছিল পাকিস্তানের এই পালাবদলে? চীনের ভূমিকাই বা কি ছিল? ইমরান খানের পতন অনেকের জন্যই শিক্ষণীয়। পাকিস্তানের বিচারবিভাগ যে স্বাধীন এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভুল রাজনৈতিক চাল ইমরানের ভবিষ্যৎকে করেছে প্রশ্নবোধক। অনাস্থা ভোটে হেরে যাবেন জেনেই তিনি নানা কূটচালের আশ্রয় নেন। যেগুলো ছিল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। আদালতের রায়ের প্রতি অবজ্ঞা। আলোচিত প্রধান বিচারপতি আদালত চত্বরে প্রবেশ করার পর আকর্ষিকভাবে সব পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তখনই জল্পনা শুরু হয়ে যায়। হয়তো প্রধান বিচারপতি ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সরাসরি পদত্যাগ করলে রাজনীতি হয়তো ইমরানের পক্ষেই থাকতো। কিন্তু কারা যেন তাকে ভুল পথে নিয়ে গেছে । অযথা সময় নষ্ট করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছেন তিনি। ইমরানের শেষদিনগুলো ছিল অগণতান্ত্রিক, একনায়কসুলভ। রাজনীতি প্রতিশোধ নেয়। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। বলা হয়ে থাকে, গণতন্ত্রের প্রতিশোধ বড় নির্মম, নিষ্ঠুর। দেশে দেশে এমনটাই হয়েছে। পাকিস্তান এখন কোন পথে হাটবে? নেপথ্যের শক্তি কি করবে এটা এখনো অস্পষ্ট। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করেছে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। শুধু পাকিস্তানে নয়, তামাম দুনিয়ায় এই বার্তা পৌঁছে গেছে। দেখা যাক না, শ্রীলঙ্কায় কি ঘটে?
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment