মায়ের কাছে টাকা পাঠিয়েছিলেন সন্তানদের গরুর দুধ কেনার জন্য। সেই দুধ নেওয়ার জন্য রোজার আগেই রংপুরের বাড়িতে আাসার কথা ছিলো বুলবুলের। রোজার আগেই তিনি বাড়িতেও আসলেন। তবে নিথর দেহে লাশবাহী গাড়িতে চেপে শেষবারের মতো বাড়িতে এলেন ‘গরিবের ডাক্তার’ আহমেদ মাহি বুলবুল।
সোমবার (২৮ মার্চ) সকালে বুলবুলের বাড়ি রংপুর নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বউবাজার ভগিবালা পাড়ায় লাশবাহী গাড়ি পৌঁছায়।
লাশবাহী গাড়িতে বুলবুলের মরদেহ পৌঁছালে কান্নার রোল পরে যায়, বাড়িতে শুরু হয় মাতম। বার বার মুর্ছা যান বুলবুলের মা- বোন। পাশে থাকা অন্য স্বজনেরাও তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। বিলাপ করছেন বুলবুলের লাশের সঙ্গে আসা স্ত্রী ও সন্তানরা। এ বিষয়ে নিহত বুলবুলের স্ত্রীর সংবাদ মাধ্যমে কথা বলার অবস্থায় নেই বলে জানান।
বাদ জোহর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পূর্ণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, রোববার (২৭ মার্চ) সকালে ঢাকায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন গরিবের ডাক্তার-খ্যাত দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুলর (৩৪)।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় থাকলেও রংপুরে মায়ের কাছে টাকা পাঠাতেন ডা. বুলবুল। বুলবুল তার সন্তানদের জন্য দুধ কিনতেও টাকা পাঠাতেন। পাঠানো টাকায় দুধ কিনে ঢাকায় পাঠানো হতো। শনিবার (২৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকেও মায়ের কাছে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। দু’-একদিনের মধ্যে বাড়িতে এসে গরুর দুধ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তা আর হলো না।
বুলবুলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরিকালীন ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্র্যাকটিস শুরু করেন বুলবুল।
২০০৮ সালে দিনাজপুরে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সামী নামে দেড় বছর বয়সী ছেলে ও আয়ন নামে ৬ বছরের মেয়ে রয়েছে বুলবুলের।