ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সুখী নন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো? একদিন আগেই এমন শিরোনামে সরব ছিল ইউরোপিয়ান গণমাধ্যমগুলো। এই কানাঘুষায় রালফ রাংনিক ছিলেন নীরব, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ দেননি সদুত্তর। সুখ-অসুখের হিসাব ঠেলে দিয়ে রোনালদো ফিরলেন স্বরূপে। রেকর্ডগড়া হ্যাটট্রিকে রেড ডেভিলদের এনে দিলেন রোমাঞ্চকর জয়। শনিবার প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচে ঘরের মাঠে টটেনহ্যাম হটস্পারকে ৩-২ গোলে হারিয়ে লীগ টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে এলো ম্যানইউ।
ঘরের মাঠে শুরুতেই রোনালদোর গোলে লিড পায় ইউনাইটেড। হ্যারি কেইনের গোলে সমতায় ফেরার পর প্রথমার্ধেই ফের দলকে এগিয়ে নেন রোনালদো। শেষাংশে হ্যারি ম্যাগুইয়ারের আত্মঘাতী গোলে পয়েন্ট খোয়ানোর শঙ্কায় পড়েছিল রেড ডেভিলরা। হ্যাটট্রিক করে দলকে বিপদমুক্ত করেন সিআরসেভেন।
ম্যানইউর হ্যাটট্রিক হিরো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ম্যাচে দ্বিতীয় গোলেই গড়েন ইতিহাস।
ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে এটি রোনালদোর ৮০৬তম গোল। ইতিহাসে ক্যারিয়ার গোলের হিসেবে সব সেরাদের অনেক আগেই পেছনে ফেলেছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার। তারপরও ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে পুরুষ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্ক ছিলই। আনঅফিসিয়াল পরিসংখ্যানবিদদের সংগঠন ‘আরএসএসএসএফ’-এর হিসাব অনুযায়ী, সাবেক অস্ট্রিয়া ও তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার স্ট্রাইকার ইয়োসেফ বিকানের গোল ৮০৫টি। এবার তাকেও ছাড়িয়ে গেলেন রোনালদো। এছাড়া আরো একটি অনন্য রেকর্ড জমা হয়েছে রনের ঝুলিতে। ৩৭ বা এর বেশি বয়সী তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লীগে এক ম্যাচে একাধিক গোল করলেন রোনালদো। আগের দুজন টেডি শেরিংহামম (একবার) ও গ্রাহাম অ্যাকেজেন্ডার (দুবার)।
ক্যারিয়ারে এটি রোনালদোর ৫৯তম হ্যাটট্রিক। আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে দ্বিতীয়। ২০০৮ সালে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেছিলেন রোনালদো। সেই মৌসুমের পরই রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান তিনি।
হ্যাটট্রিক হিরো রোনালদো সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে লিখেছেন, ‘ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফিরে প্রথম হ্যাটট্রিক পাওয়ায় দারুণ খুশি আমি। মাঠে ফিরে দলের জয়ে ভূমিকা রাখার মতো অনুভূতির মতো অন্য কিছু হতে পারে না। আমরা প্রমাণ করেছি যে, ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো দলকে হারাতে সক্ষম আমরা। ম্যানইউর জন্য কোনো সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে না। এগিয়ে চলো ডেভিলস!’
চোটের কারণে ম্যানচেস্টার ডার্বিতে দলে ছিলেন না রোনালদো। চোট সারিয়ে রোনালদোর দুর্দান্ত কামব্যাকে ম্যানইউও ফিরলো কক্ষপথে। ম্যাচশেষে সতীর্থ রোনালদোর প্রশংসা করে পল পগবা বলেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ব্যাপারে সবাই জানে… তার বিষয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। সে আগের ম্যাচে (ম্যান সিটির বিপক্ষে) খেলতে পারেনি। আজকে মাঠে ফিরেই স্কোর করেছে। তার পারফরম্যান্সে সবাই খুশি।’
পগবা বলেন, ‘ম্যাচে অসাধারণ ছিলেন রোনালদো। তার গোলগুলো ছিল দুর্দান্ত। পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে কামব্যাক করেছি আমরা।’
টানটান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ ম্যাচটিতে দুদলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল দুর্দান্ত। ম্যাচে ৪৩ শতাংশ বল দখলে রেখে ১০টি শট নেয় ম্যানইউ। যার মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ৬টি। অপরদিকে ৫৭ শতাংশ বল দখলে রাখা টটেনহ্যাম ১০টি শটের ৩টি রাখে লক্ষ্যে।
ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া বুলেট শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন রোনালদো। ৩৫ মিনিটের সময় নিজেদের ডি-বক্সে হ্যান্ডবল করে বসেন ইউনাইটেডের ডিফেন্ডার অ্যালেক্স তেলেস। পেনাল্টি থেকে ম্যাচে সমতা ফেরান হটস্পার অধিনায়ক হ্যারি কেইন। বিরতিতে যাওয়ার আগে ফের লিড এনে দেন রোনালদো। ৩৮ মিনিটে জেডন সানচোর পাস থেকে গোলটি করেন তিনি। এরপর ম্যাচের ৭২তম মিনিটে হ্যারি ম্যাগুইয়ারের আত্মঘাতী গোলে দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরে টটেনহ্যাম। সার্জিও রেগুইলনের ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল পাঠান ইউনাইটেড ডিফেন্ডার। ম্যাচের ৮১ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে হেড করে দলের জয় নিশ্চিত রোনালদো।
প্রিমিয়ার লিগে ২৯ ম্যাচে ১৪ জয় ও ৮ ড্রয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে চারে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২৫ ম্যাচে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে নেমে গেছে আর্সেনাল। ২৭ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনে চেলসি।
আরেক ম্যাচে ব্রাইটনকে ২-০ গোলে হারানো লিভারপুল ২৮ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শীর্ষে ম্যানচেস্টার সিটি।
২৭ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে আছে টটেনহ্যাম।