তানভীর আহমেদঃ তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়া, শনি, মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওর সহ ছোটবড় ২৩টি হাওর থাকলেও ‘হাওর উপজেলা’ হিসেবে ঘোষিত হয়নি তাহিরপুর উপজেলা। এতে উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত। একইভাবে হাওর ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলায় কর্মরত চাকরিজীবীরাও। তবে পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলার একই স্তরের শতভাগ শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির সুবিধা পাচ্ছেন। সেই সাথে উপজেলায় কর্মরত চাকরিজীবীরাও পাচ্ছেন হাওর ভাতা। অথচ হাওরের রাজধানী খ্যাত তাহিরপুর উপজেলা আজও ‘হাওর উপজেলা’ হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি হয় নি। তবে তাহিরপুরকে হাওর উপজেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত প্রজ্ঞাপন ঘোষণার দাবি করেন কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের হাওর, দ্বীপ বা চর এলাকার ১৬টি উপজেলার সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিক ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫’-এ উল্লেখিত প্রথম থেকে ২০টি গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ভাতা পাবেন। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গত ২৬ জানুয়ারি থেকে এসব ভাতা কার্যকর হবে। তবে হাওর, দ্বীপ ও চর হিসেবে ঘোষিত ১৬টি উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দারা নিজ উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন এ ভাতা পাবেন না। গ্রেড ভিত্তিতে মাসিক ভাতার হার হচ্ছে- প্রথম থেকে ৭ম গ্রেড পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা। অষ্টম গ্রেড ৪ হাজার ৬০০ টাকা। নবম গ্রেড ৪ হাজার ৪০০ টাকা। দশম গ্রেড ৩ হাজার ২০০ টাকা। একাদশ গ্রেড ২ হাজার ৫০০ টাকা। দ্বাদশ গ্রেড ২ হাজার ২৬০ টাকা। ত্রয়োদশ গ্রেড ২ হাজার ২০০ টাকা। চতুর্দশ গ্রেড ২ হাজার ৪০ টাকা। পঞ্চদশ গ্রেড ১ হাজার ৯৪০ টাকা। ষোড়শ গ্রেড ১ হাজার ৮৬০ টাকা। সপ্তদশ গ্রেড ১ হাজার ৮০০ টাকা। অষ্টাদশ গ্রেড ১ হাজার ৭৬০ টাকা। ঊনবিংশ গ্রেড ১ হাজার ৭০০ টাকা এবং বিশতম গ্রেডের কর্মচারীরা ১ হাজার ৬৫০ টাকা হারে ভাতা পাবেন। হাওর, দ্বীপ ও চর হিসেবে সরকার ঘোষিত ১৬টি উপজেলা হচ্ছে- ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া, চৌহালি, রৌমারি, চর রাজীবপুর, রাঙ্গাবালি, মনপুরা, ধর্মপাশা, শাল্লা, দোয়ারাবাজার, আজমীরিগঞ্জ ও খালিয়াজুরি। কিন্তু এ তালিকায় হাওরের প্রাণকেন্দ্র তাহিরপুর উপজেলার নাম রাখা হয়নি! সুলেমানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বেবী রাণী তালুকদার বলেন, তাহিরপুর উপজেলায় হাওর পাড়ে স্কুল ও বাড়ি, বর্ষাকালে প্রতিদিন নৌকায় স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। আমরা চাই তাহিরপুর উপজেলা কে হাওর উপজেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হউক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলায় কর্মরত এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, দেশের ১৬টি উপজেলার সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিক ভাতা ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫’-এ উল্লেখিত প্রথম থেকে ২০টি গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ভাতা পাবেন। অথচ আমরা হাওর এলাকায় চাকরি করেও এ ভাতা থেকে বঞ্চিত! হয়তো আমরা বদলি জনিত বা প্রমোশন হলে এখান থেকে চলে যাবো, কিন্তু পরে যারা যোগদান করবেন তারা তো এসব ভাতা পাবেন না। তাই তাহিরপুর উপজেলা কে হাওর উপজেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানাই। এছাড়াও ক’জন শিক্ষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, বর্ষাকালে হাওরাঞ্চালের প্রতিটি স্কুলে হাওরের ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে নৌকাযোগে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ উপজেলায় অসংখ্য দরিদ্র শিক্ষার্থী রয়েছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা পাচ্ছেন না হাওর ভাতা। তাই তাহিরপুরকে হাওর উপজেলা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে দ্রুত প্রজ্ঞাপন ঘোষণার দাবি করেন তারা। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, তাহিরপুর উপজেলা হাওরের রাজধানী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। নানাভাবে শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এ উপজেলার ৬০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। তাহিরপুরকে হাওর উপজেলার তালিকাভুক্ত করতে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাব।