চিকিৎসাশাস্ত্রে নজির গড়ে মানবদেহে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল শূকরের হৃদপিণ্ড। কিন্তু স্থায়ী হল না সেই সাফল্য। অস্ত্রোপচারের ২ মাস পর মৃত্যু হল মার্কিন প্রৌঢ়ের । বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মেরিল্যান্ডের ৫৭ বছর বয়স্ক ডেভিড বেনেট সিনিয়রের হার্টে গত জানুয়ারিতে একটি নজিরবিহীন অপারেশন করা হয়। কারণ তার শরীর সাধারণ হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল। প্রায় দুই মাস ধরে জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকরের হৃদপিণ্ড তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের কার্ডিয়াক ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রামের পরিচালক সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ৭ জানুয়ারি একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন ডেভিড।
ডু-অর-ডাই সিচুয়েশন থেকেই বড়সড় ঝুঁকি নেন তিনি। ডেভিডের শরীরে শূকরের হার্ট বসান। জানা গিয়েছে, যে শূকরের হার্টটি অপারেশনে ব্যবহার করা হয়েছে সেটির ১০ টি জিন ‘এডিট’ করা হয়েছিল। গ্রিফিথ জানাচ্ছেন, ”প্রথম দিকে এটি স্বাভাবিকভাবেই কাজ করতো। আমরা রোমাঞ্চিত ছিলাম , কিন্তু আমরা চিন্তিত ছিলাম আগামীকাল আমাদের জন্য কী পরিণতি নিয়ে আসবে।”মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি মিঃ বেনেটের মৃত্যুর সঠিক কারণ উল্লেখ করেনি, তবে বলেছে যে গত কয়েকদিন ধরে তার অবস্থার অবনতি হচ্ছিল । শেষমেশ চিকিৎসা কেন্দ্রে তার মৃত্যু হয়। অস্ত্রোপচারকারী ডাঃ বার্টলে গ্রিফিথ একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “মিস্টার বেনেটের মৃত্যুর কারণে আমরা বিধ্বস্ত। তিনি একজন সাহসী এবং মহৎ রোগী হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করেছেন যিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন। ডেভিড বেনেটের পুত্র এই অস্ত্রোপচার এবং বাবার যত্নের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন , তাঁর বাবার এই অস্ত্রোপচার ভবিষ্যতের রোগীদের জন্য নতুন দরজা খুলে দেবে এবং সেই দিন আসবে যেদিন অঙ্গের ঘাটতির জন্য কাউকে জীবন দিতে হবে না। চিকিৎসকরা আশা করেছিলেন যে , জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন নামে পরিচিত এই অস্ত্রোপচার নতুন অঙ্গের প্রয়োজনে বিপুল সংখ্যক রোগীদের সাহায্য করতে পারে।অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, অঙ্গদানের জন্য এই মুহূর্তে অপেক্ষমান রয়েছেন ১ লক্ষ ৬ হাজারেরও বেশি আমেরিকান। তাই যখন মিঃ বেনেটের জীবন বাঁচাতে একটি শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, তখন এটিও উত্তেজনার কারণ তৈরী করেছিল চিকিৎসক মহলে । এমনকি কয়েক সপ্তাহ ধরে, মিঃ বেনেট-ও তাঁরনতুন হৃৎপিণ্ড নিয়ে ভালো হয়ে উঠছিলেন। এমনকি ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, তাঁর গান গাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল হাসপাতালের পক্ষ থেকে । কিন্তু শেষমেশ জীবনযুদ্ধের লড়াই থামলো । বুধবার, ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিনের একজন মুখপাত্র দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেছেন মিঃ বেনেটের মৃত্যুর কোনও সুস্পষ্ট কারণ নেই এবং তার কি ঘটেছিল ডাক্তাররা তা পর্যালোচনা করছেন।তারা তাদের ফলাফলগুলি একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করার পরিকল্পনা করেছেন ।
সূত্র : www.independent.co.uk/