মোঃ রোমান, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
অবৈধভাবে ইতালী যাওয়ার সময় ঝড়োবাতাসে প্রচণ্ড ঠান্ডায় তিউনিউসিয়ার ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারায় বাংলাদেশের সাত যুবক। ৭ যুবকের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি মাদারীপুরে। নিহত পাঁচজনের মধ্যে ১ জন মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামের শাজাহান হাওলাদারের ছেলে ইমরান।
শুক্রবার রাতে ইমরানের লাশ নিহতের বাড়িতে পৌছায়। শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয় ইমরানের লাশ। নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। দালালের শাস্তিসহ অসহায় পরিবারের পাশে দাড়াবে সরকার এমনটাই দাবি স্বজন ও স্থানীয়দের।
ইমরান হাওলাদার কালু (২৩) মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারপুর এলাকার শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে। এক ভাই ও তিন বোন নিয়ে তাদের সংসার। বাবা শাহজাহান হাওলাদার পেশায় একজন ভ্যানচালক। সংসারে অভাবের কারণে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি।স্বপ্ন ছিল ইউরোপের দেশ ইতালিতে গিয়ে অভাবের সংসারে আনবেন সচ্ছলতা। সে অনুযায়ী জমি বিক্রি করে দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ১০ লাখ টাকা। লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তার ইতালি যাওয়া হয়নি। হলেন লাশ। পরে ইতালিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ১৮ দিন পরে কফিনবন্দি লাশ বাড়ি পৌঁছেছে।
জানা যায়, অবৈধভাবে ইতালী যাওয়ার সময় ঝড়োবাতাসে প্রচন্ড ঠান্ডায় তিউনিউসিয়ার ভুমধ্যসাগরে প্রাণ হারানো বাংলাদেশের সাত যুবকের নাম ২৯ জানুয়ারী এক জরুরী নোটিশের মাধ্যমে জানায় ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস। ৭ যুবকের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি মাদারীপুরে। নিহত হলো-মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামের শাজাহান হাওলাদারের ছেলে ইমরান হোসেন, মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড় গ্রামের শাহাজালাল এর ছেলে জহিরুল, ইশিবপুর এলাকার কাশেম মোল্লার ছেলে সাফায়েত, পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি গ্রামের প্রেমানন্দ তালুকদারের ছেলে জয় তালুকদার রতন ও সদর উপজেলার বাপ্পী নামে এক যুবক। নিহত ৫ জনের মধ্যে ইমরানের লাশ শুক্রবার ভোর রাতে মাদারীপুরে তার নিজ বাড়িতে পৌছায়। শনিবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ইমরানের লাশ।
ইমরানের বোন নাসরিন আক্তার বলেন, আমার ভাই নৌকায় ভূমধ্যসাগরে পাড়ি দিতে চাইনি। দালাল বলেছিল তাদের জাহাজে করে পার করাবে। তাদের বোট ছাড়ার আগে তিন দিন না খাইয়ে রেখেছিল। আমরা টাকা পাঠিয়েছিলাম। তারপরও খাবার কিনে দেয়নি। আমার ভাইকে তারা মারধর করে জোর করে নৌকায় তুলে দিয়েছিল। এখন আমার ভাইও নেই। ধারদেনাও অনেক।
নিহতের বাবা শাজহান হাওলাদার বলেন, জেলে যুগ যুগ আটকা থাকলেও বুঝতারম ছেলে বাইচা আছে। আমার আর কিছুই রইলো না। বিদেশ দিতে চাই নাই। তখন বলতো বাবা তোমার এখন কাজ করতে কষ্ট হয়। আমি বিদেশ গেলে তোমাকে আর কাজ করতে দিব না। সারা জীবন কষ্ট করছো,আর কষ্ট করতে দিমু না। আমার বাবা আমাকে ছেড়ে গেলি ক্যান। আল্লাহ আমাকে নিতে পারলা না? সাংবাদিক আর সরকারের কারনেই ছেলের মুখ শেষ বারের মতো দেখতে পারছি। আমি দালালের বিচার চাই। সরকার যেন আমার পাশে থাকে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ইমরান নামে ভূমধ্যসাগরে নিহত একজনের লাশ দেশে আসছে। দালালের বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিল নিহতের পবিবার। সরকার অসহায় পরিবারের পাশে ছিল, পাশে থাকবে। আমরা দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।