বর্তমানে যুদ্ধপরিস্থিতি বিরাজ করছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশি ইউক্রেনের। তবে ইউক্রেনকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের মিত্ররা।
এরই মধ্যে ইউক্রেন সীমান্ত হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটও তাদের মোকাবিলায় সেখানে সৈন্য পাঠানো শুরু করেছে।
তবে এর মধ্যে আলোচনাও চলছে এই সংকটকে কূটনৈতিকভাবে নিরসনের। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরিস্থিতি বিবেচনায়, এই মুহূর্তে ইউক্রেন সংকট নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- রাশিয়ার মোকাবিলা করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য কত বড় চ্যালেঞ্জ।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে একনায়ক স্বৈরাচারী শাসকদের চ্যালেঞ্জ করার যে নীতি বাইডেন নিয়েছেন – তার সাফল্য-ব্যর্থতাও অনেকটাই নির্ধারিত হবে ইউক্রেন পরিস্থিতির কী পরিণতি হয় তার ওপর।
“ইউক্রেনের ওপর থেকে হাত সরাও”- ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সৈন্য সমাবেশের পর থেকে এই বার্তা ওয়াশিংটন থেকে জোরেশোরে ক্রমাগত পুতিনকে পাঠানো হচ্ছে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাসের সামনে বেশ কিছু বিক্ষোভকারীর কণ্ঠেও ছিল সেই স্লোগান ।
আমেরিকায় অনেক রাজনীতিক এবং বৈদেশিক নীতির গবেষক এখন বলছেন, ইউক্রেনে আরও অস্ত্র পাঠাতে হবে এবং তাহলেই পুতিনের কানে পানি যাবে।
তাদের কথা- রুশ প্রেসিডেন্ট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে এতদিন যেসব সিগন্যাল পাচ্ছিলেন- তা ছিল মিশ্র। সেই সিগন্যাল এখন স্পষ্ট করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুগ্ধতা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য জটিলতা তৈরি করেছে। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ সামলাতে যখন এফবিআই গলদঘর্ম হচ্ছিল সেসময় ট্রাম্প পুতিনের গুণগানে ব্যস্ত ছিলেন এবং একইসাথে ন্যাটোকে অবজ্ঞা করছিলেন।
কিন্তু বাইডেন নির্বাচনের আগে এবং পরে অঙ্গীকার করেছিলেন- তার পূর্বসূরির ওই নীতি তিনি প্রত্যাখ্যান করবেন এবং পুতিনের “আগ্রাসী” মনোভাবকে চ্যালেঞ্জ করবেন।
কিন্তু একই সাথে বাইডেন রাশিয়ার সাথে “একটি স্থিতিশীল এবং স্পষ্ট” সম্পর্ক গড়তে চাইছিলেন, যাতে আমেরিকার প্রধান কৌশলগত চ্যালেঞ্জ যে দেশটির কাছ থেকে আসছে- সেই চীনকে মোকাবেলার প্রতি তিনি মনোনিবেশ করতে পারেন।
ফলে, রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ বন্ধের দাবিতে পুতিন যখন আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন বাইডেন একটা হোঁচট খান।
কিন্তু প্রাথমিক সেই ধাক্কা সামলে বাইডেন এই চ্যালেঞ্জকে গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলার চেষ্টা শুরু করেছেন। তবে এই চেষ্টায় বাইডেন কতটা সফল হবেন তা সময়ই বলে দেবে।
তবে এক্ষেত্রে তুরুপের তাস হিসেবে বাইডেন ইউরোপকে ব্যবহার করছেন। সেজন্য তিনি গোটা ইউরোপকে এক প্লাট ফর্মে আনার চেষ্টায় ব্যস্ত। এতে সফল হলে রাশিয়ার জন্য তা হবে বড়ই ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক পরিণতি। আর ব্যর্থ হলে ভীষণ চাপে পড়বেন বাইডেন তথা আমেরিকা। সূত্র: বিবিসি