শুধুমাত্র দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া আলমগীর কবির (৩২) এখন রীতিমত ভাইরাল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়ায় লাগানো পোস্টার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়।
এদিকে, আজ বুধবার সকালে তাকে বগুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছে। তার কোনো মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা সেকারণে ডাকা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী। বর্তমানে ভাইরাল আলমগীর কবির এখন জেলা পুলিশ কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পক্ষে-বিপক্ষে চলছে সমালোচনার ঝড়।
ভাইরাল আলমগীর কবিরের জন্ম জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বরাইল গ্রামে। পল্লী চিকিৎসক মো. কফিল উদ্দিন ও আম্বিয়া বেগমের ৫ সন্তানের মধ্যে কবির কনিষ্ঠ। বড় সন্তান রুহুল আমিন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। কবিরের বড় ৩ বোন রুপালী, নূরজাহান ও সুরাইয়া। আলমগীর কবির বর্তমানে বগুড়া শহরের জহুরুল নগর একতলা মসজিদ এলাকায় একটি বাড়িতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে থাকেন।
জানা যায়, গত কয়েকদিন যাবৎ বগুড়া শহরের জহুরুল নগর এলাকায় ‘শুধুমাত্র দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই (সকাল ও দুপুর) প্রথম থেকে দ্বাদশ (গণিত ছাড়া), পেশা বেকার’ এমন লেখা দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাটিয়ে দেন আলমগীর কবির। আলমগীর কবির বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন। ২০২০ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর থেকে সরকারি চাকরি খুঁজে যাচ্ছেন।
কিন্তু প্রত্যাশিত সোনার হরিণ নামক চাকরির নাগাল তিনি পাননি। তাই নিরুপায় হয়ে এমনটা করেছেন। পড়ানোর সম্মানী হিসেবে তিনি দু’বেলা ভাত চেয়েছেন। আর এই পোস্টারটি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর তা থেকে শুরু হয় নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। কেউ পক্ষে আবার কেউবা তার বিপক্ষে লিখেছেন।
আলমগীর কবির পোস্টারটির বিষয়ে জানিয়েছেন, তিনি অনার্স পরীক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছে। এবং মাস্টার্স পরীক্ষাতেও ভাল রেজাল্ট আছে। কিন্তু চাকরি কেন হচ্ছে না তা বুজতে পারছেন না। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। তাদেরকেও টাকা পাঠাতে হয়। তাই তিনি দুঃচিন্তায় আছেন। এখন দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চান।
অপরদিকে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলমগীর কবিরের প্রকৃত নাম আলমগীর হোসেন। তিনি অনার্স পরীক্ষা জাতীয় মেধায় প্রথম হয়েছেন যে তথ্য গণমাধ্যমকে দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি জাতীয় মেধা বা কলেজে তালিকাতেও প্রথম নন। বরং নিজ কলেজের বিভাগে ২২তম স্থান অধিকার করেছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা আলমগীর কবিরের এমন পোস্টার ও রেজাল্টের বিষয়ে জানান, চাকরি না হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে আলমগীর। দীর্ঘদিন সে শিক্ষকদের কাছে থেকে দূরে ছিল বা কোনো যোগাযোগ ছিল না। তার ভেতরে এত হতাশা বেড়েছে, যে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, ভাইরাল আলমগীর কবিরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সে সরকারি চাকরি ছাড়া করবে না। আসলে তার উদ্দেশ্য কী? তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলমগীর কবিরের করা বিভিন্ন পোস্ট নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এখন আলমগীর কবিরের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসলে আলমগীর কবিরের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?