এম এইচ রনি, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন কিংবা গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ স্বরে গান বাজানো এখন ‘নিত্যনৈমত্তিক’ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে চলমান এইচএসসি ও অনার্সের পরীক্ষার্থীরা পড়েছে চরম বিপাকে।
এছাড়া রাতে উচ্চ স্বরে গান বাজানোর ফলে মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। অথচ উচ্চ স্বরে গান বাজানো কিংবা শব্দ দূষণের সৃষ্টি করলে রয়েছে শাস্তির বিধান। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ‘আইন আছে-প্রয়োগ নেই’।
সম্প্রতি নীলফামারী সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এবারের এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা কয়েকজন পরীক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিনের বেলায় উচ্চ শব্দে গান বাজানো কম হলেও সন্ধা নামার সাথে সাথে উচ্চ স্বরে গান বাজনো শুরু হয় যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। গানের উচ্চ শব্দের কারণে পড়ায় মনোযোগ দেয়া সম্ভবপর হয় না। ফলে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
নীলফামারী উপজেলার রামনগর এলাকার বিশমুরি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। রাতে ঘুমানো যায় না উচ্চ স্বরে গান-বাজানোর ফলে। জন্মদিন কিংবা বিয়ে বাড়ি,আবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থীদের একের পর এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অথবা মনের ইচ্ছায় গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ স্বরে গান বাজানোর ফলে ঘুমানো ত দূরের কথা কানে-ই সহ্য হয় না। প্রশাসনের কাছে আবেদন যাতে বিষয়টিতে নজর দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলেনা বা অভিযোগ করেনা। অভিযোগ না করার কারণ হিসাবে ব্যক্তিগত রোষানলে পড়াসহ বিভিন্নভাবে হতে হয় নির্যাতনের শিকার বলে জানান নীলফামারী উপজেলার রামনগর ও পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের চাঁদের হাট, চড়চড়বাড়ি, খামাত পাড়া,সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর অধীনে ২০০৬ সালে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই বিধিমালার ৯ ধারায় উচ্চস্বরে গান বাজানোসহ বিভিন্ন ধরনের শব্দ দূষণের বিষয়ে বলা আছে।
বিধিমালায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে আবাসিক এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় ৫৫ ডেসিবেল ও রাতের বেলায় ৪৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ অতিক্রম করতে পারবে না।
তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে খোলা বা আংশিক খোলা জায়গায় বিয়ে বা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ধরনের সভা, মেলা, যাত্রাগানের অনুষ্ঠান করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান আয়োজককারী ব্যক্তিকে পুলিশ কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হবে। সে আবেদন মঞ্জুর হলে দৈনিক ৫ ঘণ্টা শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্র বাজানো যাবে এবং রাত ১০টার পরে তা আর বাজানো যাবে না।
এ আইনের ১৮ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্র বাজালে বা আইন অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং এক মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।এছাড়া পরে একই ধরনের অপরাধ করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন’
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করে সমাজের সাধারণ মানুষের একটাই দাবী, বিশেষ করে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যারা অনুমতি ব্যতীত উচ্চ স্বরে গান বাজায়, যারা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যঘাত ঘটায়, যারা কর্মজীবী মানুষের ঘুমের বাঁধা সৃষ্টি করে তাদের আইনের আওতায় এনে যেন শাস্তি প্রদান করা হয়।