তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: পুলিশে চূড়ান্ত চাকরি প্রত্যাশিদের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে মিষ্টি আর ফুল নিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি হাজির হচ্ছেন গাইবান্ধা জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা। এতে গোটা গাইবান্ধায় পুলিশকে নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রশংসার ঝড়। পাশাপাশি আনন্দে পুলকিত হচ্ছেন চাকরি প্রার্থীরাও।
সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ফুলছড়ি উপজেলার ৭ জনকে বাছাই করা হয়। এখন তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে। আর ভেরিফিকেশন করতে তাদের বাড়িতে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে হাজির হচ্ছেন ফুলছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কাওসার আলীসহ সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা।
এবার ইউপি নির্বাচনে ভিক্ষুক রাহেলা!
মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) ফুলছড়ি উপজেলার মধ্য উড়িয়া গ্রামের শাহজাহান, আকরাম, কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের শাপলা, পারভিনসহ সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাছাইকৃত ৭ জনের বাড়িতে তথ্য ভেরিফিকেশন করতে যান ফুলছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাওছার আলীসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য। বাড়িতে পৌঁছেই তারা তাদের হাতে মিষ্টির কার্টুন ও ফুলের তোড়া তুলে দেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শাহজাহান বলেন, ‘আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বিনা টাকায় চাকুরি হচ্ছে। পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে আমার ভীতি ও নেতিবাচক ধারণা ছিল। পুলিশের এমন মহতি উদ্যোগে আমার সে ধারণা পাল্টে গেল। আমি ভাবতেও পারিনি মিষ্টি আর ফুল নিয়ে ওসি স্যার আমার বাড়িতে ভেরিফিকেশন করতে আসবেন।’
পুলিশের এমন ব্যবহারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শাহ জাহানের বাবা আবুল কালাম।
শাহজাহানের মতো আকরাম ও শাপলা পারভিনের বাড়িতেও যান পুলিশ সদস্যরা। তারাও পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদেরকেও মিষ্টি ও ফুলের তোড়া উপহার দেন ওসি কাওসার আলী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাওছার আলী বলেন, ’পুলিশ সুপার স্যার এর নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় কারও যেন বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়, কিংবা টাকার যেন কোন লেনদেন না হয়, সেজন্য এই অভিনব কৌশল। তাছাড়া চাকরি প্রার্থীরা যেন বিষয়টাকে খুব ঝামেলার কাজ মনে না করেন, সে ধারণা থেকেই আমি তাদের বাড়িতে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছি। তিনি আরও বলেন, পুলিশিং ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।’
পুলিশের প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণা থেকে বের হয়ে আসার জন্য পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে পলাশবাড়ী থানাধীন হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকেও পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রত্যাশীদের বাড়ি বাড়ি মিষ্টি ও ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির হচ্ছেন তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রাকিব হাসান।
তিনি জানান, ‘পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এর নির্দেশে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার এলাকায় মো. শফিউল ইসলাম এর সন্তান মেহেদী হাসান শুভ মুক্তিযোদ্ধা নাতি কোঠায় চুড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হবার গৌরব অর্জন করেন। এরই প্রেক্ষিতে শুভকে তার নিজ বাড়ী তে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা ও মিষ্টিমুখ করানো হয়। এসময় মেহেদী হাসান শুভ ও তার পরিবার অশ্রুসিক্ত নয়নে পুলিশ সুপার মহোদয়কে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ‘
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এ নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম, অভিযোগের কথাও শোনা যায়। সব ধরনের অনিয়ম, অভিযোগ ও ভীতি কাটাতেই পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা আনা হয়েছে।’
উল্লেখ্য বাংলাদেশ পুলিশের কন্সটেবল পদের নিয়োগ পরীক্ষা গত ১৪ নভেম্বর গাইবান্ধা পুলিশ লাইন্স মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এর দক্ষ নেতৃত্বে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে ফিজিক্যাল ইন্ডিউরেন্স টেস্ট, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মোট ৫০ জন সদস্যকে চুড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত করা হয়। বর্তমানে তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন কর্মপ্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।