দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

রাইফেল উঁচিয়ে ধরা বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশেই ক্যামেরা হাতে ফরাসি ফটোসংবাদিক অ্যান ডি হেনিং; স্মৃতির ধুলো ঝেড়ে একাত্তরের উত্তাল সময় আবারও দেখা দিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিকামী বাঙালি যেমন অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি ক্যামেরার লেন্সকেই মুক্তি সংগ্রামের অস্ত্র করে তুলেছিলেন এই আলোকচিত্রী।

পাকিস্তানি সেনাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে কুষ্টিয়ার পথে-প্রান্তরে চষে বেড়িয়েছেন তিনি। তার তোলা ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা পৌঁছে যায় ফ্রান্সসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে।

এসব ছবিতে একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশা, শরণার্থী জীবন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ যেমন উঠে এসেছে, তেমনি স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু ছবিও ধরে রেখেছে তার ক্যামেরা।জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণবয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৭১-৭২ সালে তার তোলা দুর্লভ এবং অপ্রকাশিত এসব ছবি নিয়ে শুক্রবার বিকালে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী- ‘উইটনেসিং হিস্ট্রি ইন দ্য মেইকিং’।

আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এবং সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এই প্রদর্শনী চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সিআরআই ট্রাস্ট্রি নসরুল হামিদ।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ৭৬ বছর বয়সী ফটোসাংবাদিক হেনিং প্রদর্শনীতে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় স্মৃতিচারণ করেছেন একাত্তরের সেই দিনগুলির।

“আমি দেখেছি কিছু তরুণ মুক্তিযোদ্ধা তাদের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসছে। বাঁশের খুঁটিতে উড়ছে বাংলাদেশের সবুজ, লাল ও হলুদ পতাকা। তাদের পরনে ছিল খাকি ট্রাউজার আর জীর্ণ শার্ট। “তাদের হাতে পুরনো ৩০৩ এনফিল্ড রাইফেল। তারা আমাকে ও আমার সহকর্মীকে বিস্তৃত হাসিতে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেছিল, ‘আপনারা এখন স্বাধীন বাংলাদেশে’।মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচু করে দৃঢ় সংকল্পে তারা চিৎকার করে বলছিল ‘জয় বাংলা’।”ভিডিও বার্তার শেষে নিজের সংগ্রহে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া বাংলাদেশের পতাকা উঁচিয়ে মুক্তি সংগ্রামের বীর যোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান এ আলোকচিত্রী।

প্রদর্শনীতে একাত্তরের এপ্রিল মাসে কুষ্টিয়ার রেল স্টেশনে হেনিংয়ের তোলা একটি ছবিতে উৎসাহী কিছু তরুণের হাতে দেখা যায় বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত একটি পাতাকা।

রুক্সমিনী রেকভানা কিউ চৌধুরীর নির্দেশনা ও পরিচালনায় প্রদর্শনীর জন্য চার নম্বর গ্যালারিটি সাজানো হয়েছে বাংলাদেশের পতাকার রঙে। বাম দিক থেকে হালকা সবুজ থেকে গাঢ় সবুজ রংয়ে মিলেছে গ্যালারির দেয়াল।গ্যালারি ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ ছবিগুলোতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর।

এক ফাঁকে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, ধীরে ধীরে ইতিহাসের নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এসব আরও নতুন গুরুত্ব নিয়ে ধরা পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

“আমরা যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, তারা সেই সময়টা চোখে সামনে দেখেছি। এর সঙ্গে অনেক আবেগ জড়িত। আবেগ যখন থাকে, তখন প্রকৃত সত্যটা অনেক সময় ভেসে যায়।

“সেখানে আবেগটা সেটাকে ঢেকে ফেলে দেয়। পরের প্রজন্ম ইতিহাসটাকে আবিষ্কার করে। যত দিন যাচ্ছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইতিহাসটাকে তারা আবিষ্কার করছে।”১৯৭১ সালে কুষ্টিয়ায় তোলা অ্যান ডি হেনিংয়ের একটি ছবিতে দেখা যায় শেষ সম্বল সঙ্গে করে ট্রেন ধরতে চাইছে একটি পরিবার। কোলের সন্তানকে ছাড়িয়ে দৃষ্টি আটকে যায় একটি রেডিও আর তরুণীর হাতে ধরা পাতিহাঁসের দিকে।পাকিস্তানি সেনাদের হামলায় কুষ্টিয়ার একটি বিধ্বস্ত বাড়ির ছবির মাধ্যমে একটি জাতির জন্মযুদ্ধের ক্ষত তুলে ধরেছেন একাত্তরে ২৬ বছর বয়সী ফরাসি এই তরুণ ফটোসাংবাদিক।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি তুলতে ১৯৭২ সালে আবারও এসেছিলেন বাংলাদেশে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ছবি তুলেছিলেন।

ভাষার ব্যবধান ভেঙে অন্যের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তর্জমাও শুনেছেন। সেই ভাষণ হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন ছবির পেছনে ছোটা এই সংবাদিক।

প্রদর্শনীতে স্বামী রেজা আমিনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন অভিনেত্রী ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক শমী কায়সার, যিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে তিান বলেন “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সংস্কৃতির মুক্তি এই মুক্তির কথা যখন আমরা ভাবি যখন আমরা ফটোগ্রাফি, চিত্রকলার কথা ভাবি। সেই আলোকে দুর্লভ কিছু দিয়ে সাজানো হয়েছে।”

১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া অ্যান ডি হেনিং ২৩ বছর বয়সে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ছবি তোলেন। পরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি তার ক্যামেরায় উঠে আসে থাইল্যান্ড এবং লাওয়ের আদিবাসীদের জীবন। সেই সময়ের কিছু ছবিও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version