তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: জন্ম তাঁর গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রামে । ছোটবেলায় ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন। কখনো ভেবেছেন, সমাজসেবা করবেন। চঞ্চল মেয়েটির তখন সময় কাটত দুষ্টুমি-হুল্লোড় করে, চুরি করে সাইকেল চালিয়ে কিংবা পড়ার ফাঁকে খেলে। কে জানত দুরন্ত এই মেয়েটি একদিন দেশের নারী ক্রিকেট ইতিহাসে নাম লেখাবে।
বলছি দেশের নারী ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান টাইগ্রেস শারমিন আক্তার সুপ্তার কথা ।
গত ২৩ নভেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম কোনো সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সুপ্তা। সে সঙ্গে নাম লিখে ফেললেন ইতিহাসে। পুরুষ দলে যেমন প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নাম উঠে আসবে মেহরাব হোসেন অপির, তেমনি নারী ক্রিকেটেও প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে উঠে আসবে শারমিন আক্তার সুপ্তার নাম।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৪১ বলে ১৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন সুপ্তা। ১১টি বাউন্ডারি দিয়ে নিজের ইনিংস সাজান তিনি। শারমিনের এই ইতিহাস গড়া সাফল্যে পুরো দেশের পাশাপাশি আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছে পুরো গাইবান্ধাবাসী । শারমিনের গ্রামের বাড়িতেও বইছে আনন্দের জোয়ার ।
২৫ বছর বয়সী শারমিনের খেলাধুলায় প্রথম সাফল্য স্কুল ব্যাডমিন্টনে। চ্যাম্পিয়ন হয়ে নজর কাড়েন সকলের । ফলে খেলার আগ্রহ বেড়ে যায়। এলাকার কোচ বাবলুর কাছে ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণের হাতেখড়ি। এই কোচই তাঁকে বিকেএসপির কথা শোনায় । জানলেন, সেখানে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখাও করা যায়। স্বপ্নের বীজ বুনতে শুরু করলেন। কোচ বাবলু ই তার বাবা প্রয়াত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম কে বুঝিয়ে বি কে এসপিতে ভর্তির অনুরোধ জানান । তবে তার মা নারাজ—সামনে বৃত্তি পরীক্ষা, খেলার কোনো ভবিষ্যৎ নেই, জীবন নষ্ট হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নিয়মিত প্র্যাকটিস তাঁর থেমে থাকেনি। দিন শেষে প্রতিদিন ঝাড়ি খেতে খেতে বাসায় ঢোকেন। এরপর ২০০৮ সালে একদিন বাবা আর এলাকার বান্ধবী বর্তমানে দেশের অন্যতম নারী ক্রিকেটার ফারজানা পিংকির সঙ্গে বিকেএসপিতে পরীক্ষা দিতে গেলেন। ৮০০ মিটার দৌড়ে অংশ নিলেন, লিখিত পরীক্ষাও দিলেন। এরপর সবার সম্মতিতে বিকেএসপিতে ভর্তি হয় শারমিন। পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু প্রিমিয়ার লিগে বিকেএসপির হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে। কোচ রাশেদ ইকবাল ওপেনিং ব্যাটিংয়ে নামিয়ে দিয়ে প্রথম ম্যাচেই ৩৭ রান করলেন। লিগ খেলেই জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক এলো। এরপর থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সুপ্তার কাজ ছিল, শচীন টেন্ডুলকারের মতো ব্যাটিং প্র্যাকটিস। লেখাপড়ার তাঁর প্রেরণা বিকেএসপির বড় ভাই ও জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ভালো খেলোয়াড় হিসেবে কলেজে বিনা বেতনে পড়েছেন। তিনিই ছিলেন দলের সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়। ওডিআই স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ৫৩ রান করে মহিলা দলের হয়ে প্রথম অর্ধশত রান করার রেকর্ডটিও শারমিন আক্তার সুপ্তা নিজের করে নিয়েছিলেন । পরে ২০১৩ সালে বিকেএসপিরও সেরা খেলোয়াড় হলেন। তিনি ভারতের মাটিতে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সাফল্য অর্জন করেছেন । বিসিবি ঘোষিত ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন। শারমিন আক্তার সুপ্তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীয়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন ।