কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার) : অপহরণের ১০ দিন পর নেত্রকোনার কলমাকান্দা ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অপহৃত যুবক মাহবুব আলম বাবুকে (২৮) উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী এবং আদালতের মাধ্যমে ওই যুবককে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দিনগত রাত ১২টার দিকে কলমাকান্দার ভারতীয় সীমান্তবর্তী লেংগুরা এলাকা থেকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা পুলিশের একটি চৌকস দল।
মাহবুবু আলম বাবু কলমাকান্দার কৃষ্ণপুর গ্রামের আসাদ মিয়ার মিয়া ছেলে। তাকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তারপর দুটি ভারতীয় হোয়টসঅ্যাপ নাম্বার থেকে ভিকটিমের স্ত্রী সুরমা আক্তারের নাম্বারে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
অপহরণকারীরা হলো- কলমাকান্দার নাজিরপুর গ্রামের কেনু মিয়ার দুই ছেলে মোশারফ হোসেন (৩৫) ও মোস্তফা (৪০), লেংগুরা গ্রামের সোহেল (৩৫), ছাত্রংপুর গ্রামের গাজী মিয়ার ছেলে শান ওরফে কিবরিয়া (৩০) সহ কতিপয় অপহরণকারী। ভারতীয় দুই নাগরিক আনোয়ার ও রফিক। সন্দেহ ভাজন আসামি একই উপজেলার মনতলা গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে আল আমিন (৩২) এবং তিনি একদিনের রিমান্ড শেষে বর্তমানে জেলে রয়েছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তিপণ দাবী করে ভিকটিমের পরিবারের কাছে ভারতীয় নাম্বার থেকে ফোন আসে। বিষয়টি অবহিত করলে তিনি কৌশল অবলম্বন করেন। মুক্তিপণ পরিশোধ ও ভিকটিমকে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে হবে ভিকটিমের পরিবারের মাধ্যমে তাদেরকে জানায়।
পরে নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল, দুর্গাপুরের সার্কেলের সিনিয়র এএসপি মাহমুদা শারমিন নেলী, কলমাকান্দার ওসি মো. আবদুল আহাদ খানের সমন্বয়ে পুলিশের একটি চৌকস দল তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী লেংগুরা এলাকা হতে অপহৃত যুবককে উদ্ধার করে। পরে উদ্ধারকৃত যুবককে কলমাকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে কলমাকান্দা থানার ওসি মো. আব্দুল আহাদ খান প্রতিবেদককে জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান ৯টার দিকে ভিকটিমকে উপজেলা সদরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে ভিকটিমের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে স্ত্রী সুরমা আক্তারেরর ব্যবহৃত নাম্বারের ফোন আসে মাহবুবকে ভারতে পাচার করা হয়েছে এবং ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে মেরে ফেলা হবে। পরবর্তীতে ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দিয়ে আনোয়ার ও রফিক দুটি নাম্বার থেকে ফোনে দুই হিসাবে নম্বরে টাকা পাঠাতে বলে ভিকটিমের পরিবারকে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ভিকটিমের মা রহিমা খাতুন মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করলে সন্দেহ ভাজন হিসেবে আল আমিনকে গ্রেফতার করে। ১৯ সেপ্টেম্বর রিমান্ডে এনে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।