দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

স্টাফ রিপোর্টার : নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তা মিলে অনলাইনে গ্রুপ খুলে নিজেদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যর পাশপাশি অন্যান্য পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। তরুণদের এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন স্থানীয়রা। ফলে অল্প সময়েই তাদের পণ্যগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এ কাজে ফেসবুকে ‘মোহনগঞ্জ ই-কমার্স ক্লাব’ নামে একটি গ্রুপ খুলে উদ্যোক্তাদের একত্র করেন আরেক উদ্যোক্তা নাদিরা আক্তার মিতু। বিবিএ’র ছাত্রী মিতু। পাড়াশোনার পাশাপাশি নানান পণ্য নিয়ে অনলাইন প্লাটফর্মে ব্যবসা করছেন। উদ্যোক্তারা সবাই মিলে একত্রে কাজ করলে আরও ভাল কিছু করা সম্ভব। এমন ধারণা থেকেই এ গ্রুপের সৃষ্টি বলে জানান মিতু। গ্রুপ তৈরিতে মিতুর সহযোগী সাদিয়া ইয়াসমিন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে গড়ে তুলছেন উদ্যোক্তা হিসেবে।

সম্প্রতি ‘মোহনগঞ্জ ই-কমার্স ক্লাব’ গ্রপের উদ্যোক্তাদের দ্বিতীয়বারের মতো সাক্ষাত অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। যদিও গ্রুপটি খোলার বয়স মাত্র তিন মাস। অল্প সময়েই যেমন বেড়েছে উদ্যোক্তার সংখ্যা তেমনি বেড়েছে ক্রেতাও। এটি নিয়ে এখন আশাবাদী তারা।

এ গ্রুপের উদ্যেক্তা নাফিসা আনজুম ইমু। পড়াশোনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজ করছেন থ্রি-পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ড্রাই ফ্রুটস ও এবং হাতের তেরি ছোট পার্স ব্যাগ নিয়ে।

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শুরু করেছেন ব্যবসা। ‘স্ফূরণ’ নামে ফেসবুকে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটা পেইজ খুলে প্রচারনা করছেন। ব্যবসায়ীক উদ্যোগের বয়স মাত্র নয় মাস। অল্প সময়েই বেশ সাড়া পেয়েছেন। এই সময়ে লক্ষ টাকার জিনিসপত্র বিক্রি করেছেন। এরমধ্যে গেল ঈদেই ৩০ হাজার টাকার অর্ডার পেয়েছেন। নিজের ব্যবসা নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাস ইমু। স্বপ্ন বড় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার। নিজের কাজের পাশপাশি অন্যদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতেও কাজ করতে চান তিনি।

এদিকে উম্মে সালমা খুশি পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করেছেন নিজেকে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের ছাত্রী খুশি। কাজ করছেন হিজাব, হাতের তৈরি কাঠের গহনা,ইমপোর্টেড কিছু পণ্য নিয়ে। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘হেমন্তিনী’। ফেসবুকে এ নামে পেইজ খুলে এতে নিজের পণ্যের প্রচারণা করছেন। উদ্যোগের দশ মাসেই বেশ সাড়া পেয়েছেন। এ সময়ে প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি পৌছেছে বিক্রয়। অনলাইন মার্কেটে শুরুতে এতটুকু সাড়াতেই বেশ সন্তুষ্ট তিনি। এতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বহুগুণ জানালেন খুশি।

অন্যদিকে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার প্রতিযোগীতায় নেমেছেন মোহাম্মদ পিয়াস। মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করছেন আনন্দমোহন মোহন কলেজে। উদ্যোগের বয়স চার মাসেরও কম। কাজ করছেন হেন্ড পেইন্টেড শাড়ি, পাঞ্জাবি, বেবি ফ্রক, বেবি পাঞ্জাবি, হেন্ড পেইন্টেড মাস্ক, বেডশিট, কাপল সেট, কুশন, পলো ব্রান্ডের টি-শার্ট নিয়ে। অল্প সময়েই বিক্রি আড়াই লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু ঈদেই বিক্রির অর্ডার পেয়েছেন লাখ টাকার। কাজ নিয়ে বিরাট সন্তুষ্ট পিয়াস বলেন, ইচ্ছে আছে এই কাজ নিয়ে অনেক দুর এগিয়ে যাওয়ার। আর শিগগির আরো নতুন কিছু পণ্য যোগ করতে যাচ্ছি।

তাদের মতো এমাহানি প্রতিভা, অনন্যা পারভীন অর্না, মৌ বণিক, সাবিনা সুলতানা মৌসহ এমন অসংখ্য তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছে এই গ্রুপে। পড়াশোনার কারণে দূরে অবস্থান করলেও উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বাসিন্দা। ক্রেতাদের অধিকাংশই স্থানীয়।

নিজের তৈরি উদ্যোক্তা গ্রæপ বিষয়ে নাদিরা আক্তার মিতু জানান, মফস্বলে অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম হবে। আসলেই কি এটা সম্ভব। এখানকার মানুষ কি অনলাইন থেকে পণ্য কিনবে। এসব বিষয় ভেবে শুরুতে আশা-নিরাশার দোলায় ছিলাম। তবে এখন যা সাড়া দেখছি তাতে ভীষণ আশাবাদী। স্বল্প সময়ে অনকে উদ্যোক্তা পেয়েছি। সেইসাথে অনেক ক্রেতা। প্রতিনিয়ত প্রচুর ক্রেতা-উদ্যোক্তা যোগ দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এখান থেকে একটা বিষয় শিখেছি। সেটা হলো- নতুন কোনকিছু শুরু করতে হয়তো অনেকেই আগ্রহী হয় না। তবে একবার কেউ শুরু করলে সেটাতে সবাই যোগ দেয়। সাহস নিয়ে শুরু করাটাই একটা অনেক বড় বিষয়। তবে এখানেও কিছু প্রতিবন্ধকতা তো আছেই। এগুলো অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।

মিতু আরও বলেন, তরুণ উদ্যোক্তারা এখানে ব্যবসায় হাত পাকাচ্ছে। একদিন অনেক বড় কিছু করবে তারা। দেশের অনলাইন ব্যবসায় তখন বড় বিপ্লব হবে।

ই-ক্লাবের অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে গত ঈদে তিনটি পাঞ্জাবি কিনেছেন মোহনগঞ্জের ক্রেতা আনিস জামান। তিনি বলেন, নিজের এলাকায় অনলাইনে কেনাকাটার এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হবে ভাবতেও পারিনি। সাশ্রয়ী মূল্যে কেনা ওই পাঞ্জাবিগুলোর নিপুণ কারুকাজ পরিবার ও বন্ধুমহলের কাছে ব্যাপক প্রসংশিত হয়েছে। তবে তাদের পণ্য পৌছানোর ক্ষেত্রে কুরিয়ার চার্জ আলাদা না রেখে সেটা পণ্যের মূল্যের সাথে সংযুক্ত করলেই ভাল হতো। কারণ নিজ এলাকা থেকে বিনা চার্জেই পণ্য কিনতে চাই।

গত ঈদে এখান থেকে মেক্সি, হিজাব, মাস্ক ও লিপস্টিক সহ আরো বিভিন্ন পণ্য কিনেছেন ফারজানা সুমি। তিনি বলেন, অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়টা ভাবলেই সবার মধ্যেই একটা উদ্বেগ কাজ করে। তবে এখানে অনলাইনে কিনলেও উদ্যোক্তারা নিজের এলাকার হওয়ায় সেই টেনশনটা থাকছে না। তাদের থেকে কেনা ওই পণ্যসামগ্রীগুলো দামেও যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি মানেও খুব ভাল ও টেকসই ছিল। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগটি সত্যিই প্রসংশনীয়। সামনের দিনে তারা অনেক দূরে এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

মোহনগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, অনলাইন ব্যবসার বিষয়টি সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। সারাদেশেই ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। তবে অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারে মানুষের একটি নেতিবাচক ধারণা আছে, ছবিতে এক ধরণের পণ্য দেখিয়ে পরে দেয় অন্যটা। এই জায়গাটায় বিশ্বস্ততা তৈরি করতে পারলে এ ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের কাপড়ের ব্যবসায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

এ বিষয়ে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এটা সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। যুব উন্নয়ন থেকে ইতিমধ্যে যারা বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদেরও এই গ্রুপে যুক্ত হতে বলবো।

মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুজ্জামান বলেন, করোনাকালীন সময়ে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের নেয়া এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়। এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও তারা অবদান রাখবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযত প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করা হবে।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version